যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষ করে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেইনিং (ওপিটি) প্রোগ্রামের মাধ্যমে এফ-১ স্টুডেন্ট ভিসা থেকে এইচ-১বি ওয়ার্ক ভিসা-তে রূপান্তর করে পেশাগত জীবন শুরু করেন। তবে এখন সেই সুযোগ বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন সেনেটর টম কটনের প্রস্তাবিত ‘ওপিটি ফেয়ার ট্যাক্স অ্যাক্ট’ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আশঙ্কার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল। এবার সেনেটর চাক গ্র্যাসলিসহ আরও কয়েকজন আইনপ্রণেতা ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)-কে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা স্টুডেন্ট ভিসাধারীদের নতুন করে কাজের অনুমতি না দেয়।
আইনপ্রণেতাদের দাবি, বিদেশি শিক্ষার্থীদের এমন সুযোগ দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চাকরির প্রতিযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হতে পারে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এইচ-১বি ভিসা নীতিতে পরিবর্তন, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং কংগ্রেসের একাংশে ওপিটি প্রোগ্রাম সংকুচিত বা বাতিলের প্রবণতা—যা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলেছে।
বর্তমানে ওপিটি প্রোগ্রামের আওতায় এফ-১ ভিসাধারীরা স্নাতক শেষ করার পর যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত কাজের সুযোগ পান; আর এসটিইএম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) বিষয়ের শিক্ষার্থীরা আরও বর্ধিত সময়ের অনুমতি পেয়ে থাকেন।
তবে সাম্প্রতিক প্রস্তাব ও সম্ভাব্য নতুন আইন এই সুযোগকে কঠোরভাবে সীমিত করতে পারে। টিউশন ফি বা সাইট ভিজিট ছাড়াও, এখন কংগ্রেসে উত্থাপিত কয়েকটি বিল আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিয়োগ ও অর্থনৈতিক কাঠামোতেও সরাসরি প্রভাব ফেলতে চলেছে।
ইন্ডিয়া টুডে আরো জানায়, সেনেটর টম কটন-এর ওপিটি ফেয়ার ট্যাক্স অ্যাক্ট এবং বৃহত্তর ডিগনিটি অ্যাক্ট অফ ২০২৫ এর লক্ষ্য হলো ওপিটি কর্মীদের জন্য থাকা পেরোল ট্যাক্স এক্সেম্পশন বা বেতন-কর ছাড় বাতিল করা।
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ওপিটি-এর আওতায় কর্মরত শিক্ষার্থী ও তাদের নিয়োগদাতাকে সোশ্যাল সিকিউরিটি এবং মেডিকেয়ার (এফআইসিএ) কর দিতে হবে—যা যৌথভাবে বেতনের প্রায় ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এটি নিয়োগদাতা ও কর্মীর মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে।
যদি এসব বিল পাস হয়, তাহলে ওপিটি শিক্ষার্থীদের হাতে পাওয়া বেতন কমে যাবে এবং অনেক নিয়োগদাতা হয়তো বিদেশি স্নাতকদের নিয়োগ দেওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য হবেন।
অন্যদিকে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট (আইস) এবং স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিসিটর প্রোগ্রাম (এসইভিপি) সম্প্রতি হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। কর্মসংস্থান সংক্রান্ত অনিয়মের এসব ঘটনায় অনেকের এসইভিআইএস রেকর্ড বাতিলের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষ করার পর ক্যারিয়ার গড়ে তোলার পথ এখন স্পষ্টতই কঠিন হয়ে উঠেছে। এইচ-১বি ভিসার খরচ বেড়ে যাওয়া, ওপিটি এর ওপর কর আরোপের সম্ভাবনা, হঠাৎ সাইট ভিজিট এবং কঠোর আইন প্রয়োগ—এসব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের পছন্দের সুযোগ সীমিত হচ্ছে।
ফলে বিদেশে উচ্চ টিউশন ফি দিয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা এখন সম্ভাব্য কম বেতন, নিয়োগদাতার কঠিন স্পনসরশিপ এবং কিছু ক্ষেত্রে হঠাৎ বৈধ স্ট্যাটাস হারানোর ঝুঁকির মুখে পড়ছেন।