ভোটার আইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে প্রবাসীদের দুর্ভোগ যেন শেষই হচ্ছে না। সরকারের ঘোষণায় আশার বাণী শোনানো হলেও বাস্তবে তা এখন ‘মূলা ঝুলানো’ই রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে ১০ ভাগও আগামী নির্বাচনের আগে ভোটার আইডি করতে পারবেন না—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ ঢাকঢোল পিটিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছিল জাঁকজমকভাবে।
প্রবাসীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করে অনলাইনে আবেদন করছেন। কিন্তু এপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার ধাপে গিয়ে স্ক্রিনে ভেসে উঠছে “নভেম্বর পর্যন্ত ফুল”—অর্থাৎ নভেম্বরের আগে কোনো তারিখই পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে হলে নভেম্বরের মধ্যেই আইডি করতে হবে।
নিউইয়র্কে বসবাসরত একাধিক বাংলাদেশি আজকালকে জানান, সপ্তাহের পর সপ্তাহ চেষ্টা করেও তারা কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছেন না। কনস্যুলেটে গিয়েও সহায়তা মিলছে না বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক কনস্যুলেট ও ওয়াশিংটন দূতাবাসে ভোটার আইডি তৈরির কাজ চলছে কচ্ছপগতিতে। সীমিত লজিস্টিক সাপোর্টের কারণে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জনের বেশি আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই হারে চললে নভেম্বরের মধ্যে নিউইয়র্ক কনস্যুলেট সর্বোচ্চ ৭০০ থেকে ১,০০০টি আইডি দিতে পারবে—যেখানে অপেক্ষায় রয়েছেন অন্তত ৫০ হাজার প্রবাসী।
বৃহস্পতিবার কনসাল জেনারেল মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজা বলেন, “বর্তমান সক্ষমতা অনুযায়ী হাজার হাজার মানুষের ভোটার আইডি তৈরি করা সম্ভব নয়। জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট—দুটোরই ঘাটতি আছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে—এটি ইতিবাচক দিক। তবে বাস্তবতার কারণে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে সবাইকে আইডি দেওয়া সম্ভব হবে না।”
বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত জনবল আনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “এমন অনুরোধ আমরা করেছি, জবাবের অপেক্ষায় আছি।”
প্রবাসীদের বহু প্রত্যাশিত ভোটার আইডি কার্যক্রম অবশেষে শুরু হলেও, বাস্তবতার কঠিন দেয়ালে ঠেকে তা যেন এখনও শুধু আশার আলোই থেকে গেছে।