সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী ,
সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো সাক্ষী—
আলি আমজদের ঘড়িঘর।
যে ঘড়িঘর দিনের আলোয় সময় বলে, আর রাতে শহরের নিস্তব্ধতায় অতীতের গল্প শোনায়।
বলা হয়, অনেক বছর আগে নবাব আলি আমজদ খান নামের এক দয়ালু জমিদার ছিলেন সিলেটে।
তিনি শহরকে আধুনিক করার স্বপ্ন দেখতেন। সেসময় সিলেট ছিল নীরব, মসজিদের আজানের সুর ছাড়া শহরে সময় জানানোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
নবাব ভাবলেন— “সময়ের সঠিক ধারণা থাকলে, শহর এগিয়ে যাবে।”
এই ভাবনা থেকেই তিনি ব্রিটিশ আমলে নিজের অর্থায়নে নির্মাণ করলেন একটি ঘড়িঘর।
১৮৭২ সালের এক সকালে ঘড়িটির ঘণ্টা প্রথম বেজে উঠল—
টিক-টিক, টিক-টিক…
সেই শব্দে জেগে উঠল সিলেট শহর।
মানুষ বলল, “এটা তো আমাদের শহরের গর্ব!”
দিন কেটে বছর গেল।
সুরমার জল উঠল-নামল, ঝড় এল, শহর বদলাল—
কিন্তু ঘড়িঘরটি রয়ে গেল ঠিকই, সময়ের পাহারাদার হয়ে।
রাতে যখন শহরের আলো নিভে যায়, নদীর ধারে দাঁড়িয়ে ঘড়িঘরটি যেন নিজেই বলে—
“আমি দেখেছি শাহজালালের মাজারে ভক্তের ভিড়, দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের মিছিল,
দেখেছি সিলেটের হাসি-কান্না।
আমি সময়ের সাক্ষী, আমি সিলেটের আত্মা।”
আজও দূর থেকে কেউ যদি তাকায়, দেখতে পায় ঘড়ির কাঁটা ধীরে ধীরে ঘুরছে—
যেন বলছে, “সময় থেমে থাকে না, কিন্তু স্মৃতি চিরকাল বেঁচে থাকে।”