ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কয়েকজন নেতা–কর্মীর হাতে সাংবাদিকেরা দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফেরা এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার সংবাদ সম্মেলন বর্জন করেন সাংবাদিকরা।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিমানবন্দরের ভিআইপি ফটকে এ ঘটনা ঘটে। তখনও আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা সেখানে পৌঁছাননি।
এ বিষয়ে পরে এনসিপির পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছিলেন। ৯ দিনের নিউইয়র্ক সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীরা আজ সকাল ৯টায় ঢাকায় আসেন।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সদস্য মোহাম্মদ নকিবুর রহমান, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।
বিমানবন্দরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন সাংবাদিক প্রথম আলোকে বলেন, তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ূন কবির ভিআইপি ফটকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় আখতার হোসেন ও তাসনিম জারার জন্য ফুল নিয়ে পাশেই অবস্থান করছিলেন এনসিপির কিছু নেতা-কর্মী। হুমায়ূন কবিরের বক্তব্য চলার মধ্যেই এনসিপির নেতা-কর্মীরা ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এতে হুমায়ূন কবিরের কথা শুনতে সাংবাদিকদের সমস্যা হচ্ছিল। এনসিপির নেতা-কর্মীদের এভাবে উচ্চ স্বরে স্লোগান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন একজন সাংবাদিক। তখন এনসিপির কিছু নেতা-কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। একে কেন্দ্র করে সাংবাদিকেরা বিমানবন্দরে এনসিপি নেতা আখতার হোসেন ও তাসনিম জারার সংবাদ সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর সাংবাদিকেরা সংবাদ সম্মেলন ত্যাগ করছেন। এ সময় এনসিপির কয়েকজন নেতা তাঁদের ফিরে আসার অনুরোধ জানান। কিন্তু ক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের অনেকে নেতা–কর্মীদের আচরণের তীব্র সমালোচনা করতে থাকেন।
ভিডিওতে এনসিপির এক নেতাকে বলতে শোনা যায়, “কিছু মানুষের জন্য সবাইকে ভুল বুঝবেন না, প্লিজ।” তবে তাঁর সেই অনুরোধে সাংবাদিকেরা সাড়া দেননি। বরং এক সাংবাদিক পাল্টা জবাব দেন, “এবার ফাঁকা করে দিছি, বহু জায়গা হইছে, আপনারা মিছিল করেন।” শেষ পর্যন্ত এনসিপির অনুরোধ অগ্রাহ্য করে সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।