টানা প্রায় ১৬ বছর প্রবাসজীবন কাটানোর পর দেশে ফিরতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো চূড়ান্ত না হলেও আগামী এক মাসের মধ্যেই তার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির শীর্ষ সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ডাকসু-জাকসুসহ বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ব্যাপক সাফল্য জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তথা বিএনপিকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, আর সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও দলকে বিজয়ের পথে নেওয়া নির্ভর করছে তারেক রহমানের নেতৃত্বের ওপর।
তারেক রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পুত্র এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান। ২০০৭ সালের ১/১১-এর সেনা সমর্থিত সরকার তার বিরুদ্ধে নির্যাতন চালিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল। তখন থেকে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। যদিও মোবাইল ফোন ও অনলাইন যোগাযোগের মাধ্যমে দলীয় নেতাদের সঙ্গে সংযোগ রাখছেন, তবে সশরীরে কোনো যোগাযোগ তার ছিল না।
বিএনপি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল, যার নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরে দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তার পক্ষে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করা কঠিন হয়ে পড়ায় নেতৃত্বে সামনে আসতে হয়েছে তারেক রহমানকে। রাজনৈতিক ইতিহাসে বিএনপি বারবার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি কিংবা সেনা সমর্থিত সরকারের কাছ থেকে কঠোর আচরণের শিকার হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিও তারেক রহমানের জন্য সহজ নয়—নানা ধরনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই তাকে এগোতে হবে।
দলের ভেতরে প্রকাশ্যে তারেক রহমানের নেতৃত্বকে কেউ চ্যালেঞ্জ না করলেও, গোপনে অনেক প্রভাবশালী নেতা তাকে শীর্ষে দেখতে অনিচ্ছুক। তাদের মতে, ক্ষমতা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে এই ভেতরের দ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্যে আসতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের সঙ্গে দলের কিছু নেতার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক যোগাযোগও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। অতীতে মনোনয়ন বাণিজ্যে জড়িত কিছু গোষ্ঠীর সঙ্গে তারেক রহমানের সম্পর্ক অব্যাহত থাকায় বিএনপির ভেতরেই গভীর অস্থিরতা বিরাজ করছে।
এদিকে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে জামায়াতে ইসলামি। তাদের সঙ্গে বিএনপির টানাপোড়েন প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে দুইভাবেই চলছে। জামায়াত ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছে বিএনপির প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া ও তারেক রহমানের রাজনৈতিক কৌশলের ওপর। নির্বাচনের সময়সূচি পরিবর্তন বা ভোট পিছিয়ে গেলে রাজনৈতিক সমীকরণ আরও জটিল হবে। এ অবস্থায় জামায়াত সমমনা ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কৌশল নির্ধারণে এগোচ্ছে, যা বিএনপির জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগও কৌশলগতভাবে জামায়াতকে সহযোগিতা করছে, যাতে বিএনপির নেতৃত্ব সংকট আরও প্রকট হয়।