অর্থ মন্ত্রণালয় প্রথম দফায় প্রস্তাব বাতিল করার পরও পরবর্তী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য আরও বেশি দামে বিলাসবহুল গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেওয়ায় প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির মতে, এ ধরনের কেনাকাটায় অতিরিক্ত আগ্রহের পেছনের কারণ খুঁজে বের করাও জরুরি।
টিআইবি বলছে, সমালোচনার মুখে প্রথম প্রস্তাব নাকচ হওয়ার পর আরও বেশি দামে গাড়ি কেনার নতুন প্রস্তাব উত্থাপন বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলের মতোই একদল আমলার পরবর্তী সরকারের সম্ভাব্য মন্ত্রীদের খুশি করতে অতিউৎসাহী তোষামোদমূলক আচরণের নিন্দনীয় পুনরাবৃত্তি।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একজন মন্ত্রী কোন ধরনের পরিবহন সুবিধা উপভোগ করবেন, তা দি মিনিস্টারস, মিনিস্টারস অব স্টেট অ্যান্ড ডিপুটি মিনিস্টারস (রিমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর ৬ (এ)-তে বলা আছে। আইন অনুযায়ী একজন মন্ত্রী সরকারিভাবে সার্বক্ষণিক একটি কার ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে থাকেন। বিগত সময়ে মন্ত্রীরা এবং বর্তমানে উপদেষ্টারা কার ব্যবহার করছেন। সেখানে হঠাৎ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আইন বহির্ভূতভাবে ভবিষ্যৎ মন্ত্রীদের জন্য বিলাসবহুল টয়োটা ব্রান্ডের ল্যান্ড ক্রুজার কেনার জন্য এতটা উদগ্রীব কেন? তা বোধগম্য নয়। সরকারকে এ জাতীয় আগ্রহের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করার আহ্বান জানাই।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি গাড়ি কেনার এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—কোন যুক্তিতে সরকার এ বিষয়টিকে এত গুরুত্ব দিল? ভবিষ্যৎ সরকারের মন্ত্রীরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন—এ নিশ্চয়তা বর্তমান সরকারের কাছে কোথায়? সরকারের ব্যয় সংকোচনের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে এই ক্রয় কেন করা হবে? এটি কি জবাবদিহিমূলক সরকারব্যবস্থা ও রাষ্ট্রসংস্কারে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকারের স্ববিরোধী আচরণ নয়? আর এর দায়ভার নেবে কে?
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের এমপিদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা বিলাসবহুল অব্যবহৃত গাড়ি কমদামে বিক্রির সুযোগ থাকবে। অথচ যুক্তি দেখানো হচ্ছে—‘বিদ্যমান গাড়ি দিয়ে নির্বাচনী এলাকা সফর বা জরুরি কাজ করা কঠিন।’ ড. ইফতেখারুজ্জামান এটিকে বিস্ময়কর বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, এক শ্রেণির অতিউৎসাহী স্বার্থান্বেষী আমলাদের তোষণমূলক প্রস্তাবের ভিত্তিতে গাড়ি কেনার এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। এটি সেই প্রভাববলয় রক্ষার সংস্কৃতিরই ধারাবাহিকতা, যা পতিত সরকারের আমলে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়েছিল।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের অবিবেচনাপ্রসূত ও তোষামোদমূলক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং ভবিষ্যৎ মন্ত্রীদের গাড়ি কেনার বিষয়টি পরবর্তী সরকারের বিবেচনার জন্য স্থগিত রাখতে হবে।