ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সিনেটের জন্য ডাকসুর পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছে।
রোববার সকালে উপাচার্য কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকসুর কার্যক্রম শুরু হলো। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।
সভায় নবনির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মুহা. মহিউদ্দীন খান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতেমা তাসনিম জুমা, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক মো. আসিফ আবদুল্লাহসহ মোট ২৭ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তবে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে ব্রিফ করেন ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ। তিনি বলেন, সভার শুরুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ফুল দিয়ে উপাচার্য শুভেচ্ছা জানান। তাঁরাও উপাচার্যকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর তাঁরা পরস্পর পরিচিত হয়েছেন। ভিপি, ভারপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ ও সবশেষ ডাকসুর সভাপতি হিসেবে উপাচার্য বক্তব্য দেন সভায়। সভায় সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি ও ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ কে হবেন, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা গেজেটের মাধ্যমে দ্রুতই প্রকাশ করা হবে।
এস এম ফরহাদ বলেন, আজ থেকে তাঁরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছেন। ডাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে যে যেই মতেরই থাকুক না কেন, সবকিছু পেছনে রেখে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে তাঁরা তাঁদের কণ্ঠস্বর হতে চান। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আগামী এক বছরে কী কী কাজ করবেন, কোন সপ্তাহে কী কাজ করবেন—সেটির পুরো পরিকল্পনা প্রস্তুত করে অল্প সময়ের মধ্যে তাঁরা কাজে নেমে পড়বেন।
এস এম ফরহাদ বলে, ডাকসুর পক্ষ থেকে সিনেটে পাঁচজন প্রতিনিধি পাঠানোর বিষয়ে আজকের সভায় আলোচনা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন প্রতিনিধি কারা হবেন, সে ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন তাঁরা। ডাকসু থেকে ভিপি আবু সাদিক কায়েম, জিএস এস এম ফরহাদ, এজিএস মুহা. মহিউদ্দীন খান, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক আসিফ আবদুল্লাহ ও সদস্য সাবিকুন্নাহার তামান্না সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন। অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিনিধিদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ হবে বলে আশা রাখছেন তাঁরা।
ছাত্র প্রতিনিধি ঠিক করার যুক্তি তুলে ধরে এস এম ফরহাদ বলেন, আগে কীভাবে এ কাজ হয়েছে, সে অভিজ্ঞতা তাঁরা জেনেছেন। সেই আলোকে প্রতিনিধি হিসেবে ভিপি, জিএস, এজিএস থাকছেন। সম্পাদকদের মধ্যে থেকে ছাত্র পরিবহন সম্পাদক ও সদস্যদের মধ্য থেকে একজন ঠিক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় একটা অংশ অনাবাসিক শিক্ষার্থী। এ কারণে ছাত্র পরিবহন সম্পাদককে রাখা হয়েছে। যাতে তিনি তাঁদের সমস্যার কথাগুলো তুলে ধরতে পারেন। পাশাপাশি ছাত্রীদের সমস্যা তুলে ধরতে সাবিকুন্নাহার তামান্নাকে রাখা হয়েছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরে ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেন, আজ থেকেই তাঁদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচিত কেউ নেতা নন—তাঁরা সবাই শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি। শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব হলো প্রশ্ন করা, আর তাঁদের দায়িত্ব হলো দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা। সভায় উপস্থিত সবার প্রতিশ্রুতি হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, একাডেমিক কিংবা ক্যাম্পাসের বাইরের যেকোনো সমস্যা বড় ভাই বা বড় বোনের মতো শুনবেন ও সমাধানের চেষ্টা করবেন।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনের পর তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে তাঁদের মতামত শুনেছেন। তাঁর ভাষায়, এই নির্বাচনে সবাই জিতেছেন—ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম বিজয়ী হয়েছে, শহীদদের স্বপ্ন পূরণের পথ সুগম হয়েছে।