প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সহকারী শিক্ষক পদে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন। তারা সতর্ক করে বলেছেন, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন শুরু করবেন।
শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক মহাসমাবেশে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সহকারী শিক্ষকদের নিবন্ধিত ছয়টি সংগঠনের জোট ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো, ১০ বছর ও ১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন করা ও সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি দেওয়া।
এদিন সকাল ১০টা থেকে এই সমাবেশ শুরু হয়। এতে সারাদেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক অংশ নেন। দুপুর দুইটার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গাড়িতে করে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যান। সেখানে তারা দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। একইসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার জন্য আবেদনপত্রও জমা দেন। সেখান থেকে ফিরে এসে বিকেল ৪টার দিকে কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মনির হোসেন। এই ঘোষণার মাধ্যমের সমাবেশের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়।
এর আগে, মনির হোসেনের সভাপতিত্বে সকালে মহাসমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, শিক্ষকতা একটা পেশা বটে। কিন্তু এটা পেশার চাইতে ঊর্ধ্বে। শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকরা অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেন। সমাজে যেন শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল করতে হবে।
আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন, আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য অধ্যাপক এ বি এম ফজলুল করীম, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।
প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শামসুদ্দিন মাসুদ, জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি শাহীনূর আক্তার, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি মো. আনিসুর রহমান ও সংগঠনের নেতা তপন মণ্ডল প্রমুখ।
শিক্ষকরা বলেন, আমরা ২০০৬ সালের আগে প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপে চাকরি করতাম। ২০০৬ সালের ২৯ আগস্ট প্রধান শিক্ষকদের দুই ধাপে বেতন বৃদ্ধি হয়। আমাদের এক ধাপ হয়। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ হাইকোর্ট রায়ের ফলে প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে করা হয়। ১০ম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা থেকে শুরু হলে ১৬ বছর পর দুইটি টাইম স্কেল পেয়ে একজন প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল দাঁড়াবে ২৩ হাজার টাকা। অপরদিকে, একজন সহকারী শিক্ষক ১৩তম গ্রেডে বেতন স্কেল ১১ হাজার টাকায় শুরু হয়ে ১৬ বছর পর দুইটি টাইম স্কেল পাওয়ার পর দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা।
তারা বলেন, ১৬ বছর চাকরি করার পর একজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে একজন সহকারী শিক্ষকের বেতনের বৈষম্য হবে আনুমানিক প্রায় ২৫ হাজার টাকা। ফলে সহকারী শিক্ষকদের সাথে বেতন গ্রেড বৈষম্য চরম আকার ধারণ করবে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে এবং মেধাবীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে হলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতিসহ ১১তম গ্রেডে দ্রুত বেতন নির্ধারণ করতে হবে।
দাবি আদায়ে সহকারী শিক্ষকরা এর আগে ধাপে ধাপে কর্মবিরতি পালন করেন। গত ৫ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী কর্মবিরতি দিয়ে শুরু করেন তারা। পরে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিও পালন করেন। সর্বশেষ ২৯ মে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন তারা।