সাবের হোসেন চৌধুরী (উপরে বাঁয়ে), রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন ((উপরে ডানে), রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস (নিচে বাঁয়ে) ও রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মলার (নিচে ডানে)। ছবি : সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন দেশের রাষ্ট্রদূত গোপন বৈঠক করেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।
সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার (৬ অক্টোবর) গুলশান-২ এলাকার সাবের হোসেন চৌধুরীর নিজ বাসভবনে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে বৈঠকটি। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে অংশ নেন ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মলার।
অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তারা ফ্ল্যাগবিহীন একই গাড়িতে চড়ে সাবের হোসেনের বাসায় প্রবেশ করেন এবং বৈঠক শেষে নজর এড়াতে বিকল্প পথে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। সাধারণ কূটনৈতিক সাক্ষাতে এমন গোপনীয়তা সচরাচর দেখা যায় না।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হওয়ায় বৈঠকটি গোপন রাখাই ছিল যুক্তিসঙ্গত। বৈঠকে মূলত আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল, আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জনের পথ এবং দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দল আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না, সে বিষয়ে কূটনীতিকরা জানতে চান সাবের চৌধুরীর কাছে। এ ছাড়া কীভাবে দলটির কার্যক্রম ফের শুরু করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয় দুপক্ষের।
নর্ডিক রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতিকরা আওয়ামী লীগের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সদস্যদের যদি বর্তমান সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়, তাহলে বিদেশি কূটনীতিকদের তাতে কোনো আপত্তি নেই বলে জানান। বরং নির্বাচনের মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পুরোপুরি বজায় থাকবে বলেই মনে করেন তারা।
যদিও বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে খোলাসা করেনি।
এর আগে গত ১১ মে সন্ধ্যায় সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। পাঁচ মাস আগে কঠোর গোপনীয়তায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকেও যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে সাবের হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে তখন জানা গিয়েছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ওই বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে কিছু জানাতে না চাইলেও দাবি করেন, তারা সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যান, যা তাদের দীর্ঘদিনের অনুসরণীয় কূটনৈতিক রীতির অংশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের যে বৈঠক হয়েছে তা বোঝার জন্য আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থানকে বিবেচনায় রাখা জরুরি।