রাতভর ভালো ঘুম হলেও সকালে বিছানার থেকে উঠার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেরই কোমরে ব্যথা শুরু হয়। এই ব্যথা পুরো দিনের কাজের আনন্দকেই ম্লান করে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি খুব সাধারণ একটি সমস্যা, তবে এর পেছনে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সংবাদমাধ্যম ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ডা. তারা–লিন হলিন্স জানান, ঘুমের ভঙ্গি, দীর্ঘ সময় অচল থাকা, অনুপযুক্ত গদি বা বালিশ, এমনকি কিছু শারীরিক সমস্যা সকালবেলা কোমর ব্যথার মূল কারণ হতে পারে।
সকালে কোমর ব্যথার সাধারণ ৪টি কারণ
১. ভুল ঘুমের ভঙ্গি
দিনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় আমরা ঘুমিয়ে কাটাই। ঘুমের সময় মেরুদণ্ড সঠিক অবস্থায় না থাকলে কোমরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। সবচেয়ে ভালো ঘুমের ভঙ্গি হলো:
- পাশ ফিরে শোয়া: হাঁটু হালকা বাঁকানো অবস্থায়।
- পিঠের ওপর শোয়া: যদি স্লিপ অ্যাপনিয়া না থাকে।
- পেটের ওপর শোয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে ঘাড় ও মেরুদণ্ডে মোচড় লাগে।
২. দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকা
ডেস্কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলে শরীর শক্ত হয়ে যায়। অনুরূপভাবে, রাতভর এক ভঙ্গিতে শোয়ার ফলে পেশি শক্ত হয়ে প্রদাহ তৈরি হয়। সকালে নড়াচড়া করার সময় এই ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
৩. অনুপযুক্ত গদি বা বালিশ
অতিরিক্ত নরম বা ঢেবে যাওয়া গদি মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁক নষ্ট করে, যার ফলে কোমরে চাপ পড়ে। গদি খুব শক্তও হওয়া উচিত নয়; মাঝারি শক্তির এবং সাপোর্টিভ গদি সবচেয়ে ভালো।
৪. শারীরিক সমস্যা বা গর্ভাবস্থা
ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ, ফাইব্রোমায়ালজিয়া, স্পাইনাল আর্থ্রাইটিস, সায়াটিকা বা হারনিয়েটেড ডিস্কে সকালবেলা কোমর ব্যথা বেশি হতে পারে। গর্ভাবস্থাতেও বাড়তি ওজন এবং শরীরের ভারসাম্য পরিবর্তনের কারণে একই সমস্যা দেখা দেয়।
ব্যথা কমানোর উপায়
- সাপোর্টিভ বালিশ ব্যবহার করুন:
- পাশে শোয়ার সময় হাঁটুর মধ্যে ছোট বালিশ রাখুন।
- পিঠের ওপর শোয়ার সময় হাঁটুর নিচে বালিশ দিন।
- ঘুমের ভঙ্গি ঠিক করুন:
- পাশে শোয়ার সময় হাঁটু হালকা বাঁকানো রাখুন।
- পিঠের ওপর শোয়ার সময় দুই হাত একই অবস্থানে রাখুন।
- গদি নিয়মিত বদলান: সাধারণত ৬–৮ বছর পর গদি বদলানো উচিত। যদি গদি ঢেবে যায় বা শোয়ার পর ব্যথা হয়, আগে বদলান।
- উঠার আগে ধীরে ধীরে নড়াচড়া করুন: বিছানায় হালকা স্ট্রেচ করুন, এক পা বুকে টেনে ধরে কয়েক সেকেন্ড রাখুন, তারপর অন্য পা। প্রয়োজন হলে হিটিং প্যাড দিয়ে পেশি গরম করুন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন
কোমর ব্যথা স্বাভাবিক হলেও, যদি দুই–তিন মাস ধরে প্রতিদিন সকালে ব্যথা হয় বা ধীরে ধীরে বেড়ে যায়, তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন। সঠিক ব্যায়াম, শারীরিক থেরাপি বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। সময়মতো চিকিৎসা নিলে সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা কমে।
সকালের কোমর ব্যথা অনেকের দৈনন্দিন জীবনের অস্বস্তি হলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি সহজ কারণের কারণে হয়—ভুল ঘুমের ভঙ্গি, অনুপযুক্ত গদি-বালিশ বা দীর্ঘ সময় অচল থাকা। সামান্য পরিবর্তন যেমন সাপোর্টিভ গদি-বালিশ ব্যবহার, ঘুমের ভঙ্গি ঠিক করা, ঘুম থেকে ওঠার পর স্ট্রেচিং করার মতো অভ্যাসেই ব্যথা অনেক কমানো সম্ভব। তবে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এই ছোট ছোট যত্ন ভবিষ্যতের বড় ধরনের জটিলতা থেকে রক্ষা করবে।