Dark
Light
Today: October 16, 2025
October 17, 2025
36 mins read

শুক্রবার স্বাক্ষরিত হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ, কী থাকছে খসড়ায়

বহুল প্রত্যাশিত ‘জাতীয় জুলাই সনদ–২০২৫’–এর স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আগামীকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিকেল ৪টায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি অংশ নেবেন সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা।

গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। সেই ধারাবাহিকতায় সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ—এই ছয়টি ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলো। এসব প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চালায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

দুই দফায় আয়োজিত আলোচনায় প্রথমে ৩৩টি এবং পরবর্তীতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হয়। গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত চলা এই আলোচনায় মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়

এরপর ১৬ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের প্রাথমিক খসড়া পাঠানো হয়। কিছু ত্রুটি সংশোধনের পর ২০ আগস্ট সংশোধিত খসড়া পাঠায় কমিশন এবং মতামত দেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে ২২ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা করে সনদের বিষয়বস্তু আরও পরিমার্জন করা হয়।

সবশেষে, দলগুলোর মতামত যাচাই ও সংশোধনের পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন লিখিতভাবে জুলাই সনদকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সনদের চূড়ান্ত কপি আনুষ্ঠানিকভাবে সব রাজনৈতিক দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এখন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো ‘জাতীয় জুলাই সনদ–২০২৫’-এর চূড়ান্ত রূপ।

জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

ব্লক-১, এমপি হোস্টেল, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, শেরে-বাংলা নগর, ঢাকা।

১৪ অক্টোবর, ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

ব্লক-১, এমপি হোস্টেল, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, শেরে-বাংলা নগর, ঢাকা।

ই-মেইল: crcbd@legislativediv.gov.bd

জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫

সুদীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের এক ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোট ও শক্তিসমূহের পারস্পরিক ও সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি:

১। পটভূমি

প্রায় দুশো বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনগণের দীর্ঘ লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় এবং পূর্ব-বাংলা তার অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসন, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব-বাংলার জনগণ সংক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং তৎপরবর্তী ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকার-সংগ্রামের বাস্তব প্রতিফলন ঘটে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ জনগণের উপর বর্বরোচিত গণহত্যা শুরু করলে পরদিন ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরিণতিতে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই স্বাধীন দেশের অভ্যুদয় ঘটে। মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন‌্যায়বিচারের নীতিকে ধারণ করে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের যে আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, দীর্ঘ ৫৩ বছরেও তা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। শাসন ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও সংস্কৃতি বিকাশের ধারা বারবার হোঁচট খেয়েছে। ১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়। ওই বছরই এক সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে সংঘটিত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থার পতন ঘটে। নানামুখী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৮ সালে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব‌্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের উদ‌্যোগের ফলে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ‌্য দিয়ে দেশ আবারও গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন করে। কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যে কারণে বিগত পাঁচ দশকে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্

২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে লগি-বৈঠা তাণ্ডবে দেশে কয়েকটি নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় এবং সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি ও একটি অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১/১১ সরকার নামে পরিচিত। যার ফলে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। বিগত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে ক্রমান্বয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করতে থাকে। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার হরণ, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নিপীড়ন-নির্যাতন, মামলা ও হামলার মাধ্যমে একটি নৈরাজ্যকর ও বিভীষিকাময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সংঘটিত হয় এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে বিশেষ ব্যক্তি, পরিবার ও গোষ্ঠী বন্দনার জন্য নিবেদিত রাখা হয়। দেড় দশকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার জনস্বার্থের বিরুদ্ধে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানের বিকৃতি সাধন, বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন, ২০১৪, ২০১৮

এ পটভূমিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর তথা জনগণের দীর্ঘ ১৬ বছরের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সরকারি চাকরিতে কোটা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের এক দফা আন্দোলনে বিপুল সংখ‌্যক ছাত্র-শ্রমিক-নারী-পেশাজীবী তথা ফ্যাসিস্ট বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সব স্তরের জনতার অংশগ্রহণের ফলে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে রেমিট্যান্স বন্ধ করাসহ অব্যাহতভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সফল এই অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত লগ্নে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের তাৎপযপূর্ণ ভূমিকা স্বৈরাচারের পতনকে ত্বরান্বিত করে। এতে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে শিশু ও নারীসহ সহস্রাধিক নিরস্ত্র নাগরিক নিহত এবং বিশ হাজারের বেশি মানুষ গুরুতর আহত হয়। তাদের আত্মাহুতি, ত্যাগ এবং জনগণের সম্মিলিত শক্তি ও প্রতিরোধের মুখে ফ‌্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসররা পরাজিত হয়ে অনেকেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

বর্ণিত প্রেক্ষাপটে, জনগণের মননে রাষ্ট্র-কাঠামো সংস্কারের এক প্রবল আকাঙ্ক্ষার স্পষ্ট প্রকাশ ঘটে; বিশেষত সংবিধানের মৌলিক সংস্কার, ধ্বসে পড়া নির্বাচনি ব্যবস্থা, আইনি ও বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনিক ও পুলিশি ব্যবস্থা এবং দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহির ব্যবস্থায় সর্বত্র ব্যাপক সংস্কারের জোরালো আওয়াজ ওঠে । এ প্রেক্ষাপটেই গণঅভ্যুত্থানের সরকার প্রথম দফায় বিষয়ভিত্তিক ৬টি পৃথক সংস্কার কমিশন গঠন করে।

২। সংস্কার কমিশন গঠন

গণঅভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে ৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে জারীকৃত পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পাঁচটি সংস্কার কমিশন যথা, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন এবং এরপর ৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে জারীকৃত অপর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে। উক্ত কমিশনগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লিখিত মতামত এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধিসহ অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত সুপারিশসহ প্রতিবেদন ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাখিল করে।

৩। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন

সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়াকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে সহ-সভাপতি এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধানগণ এবং বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের একজন সদস‌্যকে সদস্য করে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের পরিবর্তে উক্ত কমিশনের একজন সদস‌্যকে জাতীয় ঐকমত‌্য কমিশনের সদস‌্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে কমিশন কিছুটা পুনর্গঠন করা হয়। তাছাড়া, রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তথা সরকারের নিবিড় যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রধান উপদেষ্টা একজন বিশেষ সহকারী (ঐকমত‌্য গঠন) নিয়োগ দেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্ব ছিল ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ‌্যে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক

৪। কমিশনের কার্যক্রম

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখের মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো অনুলিপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে প্রেরণ করা হয়। এরপর ৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে পুলিশ সংস্কার কমিশন ব্যতীত অপর পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার বিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন ব‌্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংস্কার বিষয়ক ২৩টি, জনপ্রশাসন সংস্কার বিষয়ক ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার বিষয়ক ২০টি সুপারিশ ছিল। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি। অপরদিকে, সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মোট ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে প্রেরণ করে, অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও প্রদান করে। মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে কিছু দলের সঙ্গে কমিশনের একাধিকবার বৈঠক হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষে কমিশন মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কার বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ মোট ২০টি বিষয় নিয়ে দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় মিলিত হয়। এ পর্যায়ে ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ৩০টি দল ও জোটের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন। এ পর্বে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ২৩টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনার ভিত্তিতে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত এই সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার ফলাফলস্বরূপ নিম্নলিখিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ কিছু বিষয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের ভিন্নমতসহ সর্বসম্মতভাবে প্রণীত হয়।

৫। ঐকমত‌্যের ঘোষণা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে, আমরা অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা স্ব-স্ব দলের পক্ষ থেকে—

(ক) বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থা তথা সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে নিম্নলিখিত কাঠামোগত, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের ব্যাপারে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি;

(খ) এসব বিষয়কে এই জাতীয় সনদে (কিছু বিষয়ে ভিন্নমতসহ) সন্নিবেশিত করতে সম্মত হয়েছি; এবং

(গ) ২০০৯ সাল পরবর্তী ১৬ বছরে ফ‌্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ, গ্রেফতার ও কারাবরণকারীদের প্রতি সহমর্মিতা এবং উক্ত গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতার স্মারক হিসেবে আমরা এই সনদকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ হিসেবে ঘোষণা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Previous Story

যমুনা ঘেরাও কর্মসূচি স্থগিত, আন্দোলনরত শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

Next Story

ট্রাম্পের হুমকি: হামাসকে ধ্বংস করা হবে।

Previous Story

যমুনা ঘেরাও কর্মসূচি স্থগিত, আন্দোলনরত শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

Next Story

ট্রাম্পের হুমকি: হামাসকে ধ্বংস করা হবে।

Latest from Blog

ডাকসু, জাকসু ও চাকসুর পর রাকসুতেও শিবিরের বিজয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ) এবং জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাউদ্দিন আম্মার জয় হয়েছে। ৩ দশকেরও

ওয়াশিংটনে ইউএস চেম্বারের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল

ওয়াশিংটনে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৩ অক্টোবর সকাল ৯টায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক দূত লুৎফে

নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনে বিজ্ঞাপন বন্ধ হচ্ছে

নিউইয়র্কের সবচেয়ে ব্যস্ত ট্রানজিট হাব গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন—যেখানে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ ট্রেনে ওঠানামা করেন। সাধারণত ঝলমলে বিজ্ঞাপনে ভরা থাকে স্টেশনের প্রতিটি দেয়াল। কিন্তু এবার সেই দৃশ্য বদলে গেছে পুরোপুরি। বিশাল এই স্টেশন

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে না এনসিপি

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) গভীর রাতে দলটির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনসিপির

ট্রাম্পের হুমকি: হামাসকে ধ্বংস করা হবে।

ট্রাম্প বললেন — হামাস গাজায় যদি আবার গ্যাং ও ইসরায়েলি সহযোগীদের টার্গেট করে হামলা চালায়, তাহলে তিনি হামাসকে নিশংস করে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করবেন। কাতারের আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
Go toTop

Don't Miss

ডাকসু, জাকসু ও চাকসুর পর রাকসুতেও শিবিরের বিজয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রশিবির

ওয়াশিংটনে ইউএস চেম্বারের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল

ওয়াশিংটনে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের একটি