ওয়াশিংটনে ছয় বছর পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠকে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তুরস্কের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে দেশটির কাছে আবারও মার্কিন তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির সুযোগ দেওয়া হতে পারে। তবে শর্ত হিসেবে তিনি চান, আঙ্কারা যেন রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসে একসঙ্গে বসে এরদোয়ানকে ‘খুব কঠিন চরিত্রের মানুষ’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে দেন—ইউক্রেনে যুদ্ধ চলার সময় তুরস্কের রুশ তেল কেনা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অগ্রহণযোগ্য। বর্তমানে ইউরোপে রাশিয়ার প্রধান তেল ক্রেতাদের মধ্যে তুরস্ক, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, এরদোয়ান চাইলে শিগগিরই তিনি পছন্দসই সামরিক সরঞ্জাম কিনতে সফল হবেন। এমনকি বৈঠক ফলপ্রসূ হলে খুব দ্রুতই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও ইঙ্গিত দেন তিনি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তুরস্ককে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প রাশিয়ার ব্যাপারে তুলনামূলক নমনীয় অবস্থানে এবং এরদোয়ানের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কও ভালো। ফলে আঙ্কারা আশা করছে, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
তবে সম্পর্কের ইতিহাসে কিছু জটিলতাও আছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সিরিয়া ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে উভয় দেশই সিরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে তুরস্ক গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করায় আলোচনায় নতুন বিতর্কের সম্ভাবনাও রয়েছে।
এর আগে এরদোয়ান জানিয়েছিলেন—বৈঠকে প্রতিরক্ষা শিল্প, এফ-৩৫ ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের আলোচনা হবে। আঙ্কারা এরই মধ্যে ৪০টি নতুন এফ-১৬ কেনার পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তি সংযোজনের দাবি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি এসব বিক্রির বিষয়ে একটি ‘স্টেটমেন্ট অব ইন্টেন্ট’ খসড়া করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র আইন অনুযায়ী, তুরস্ক যত দিন রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাখবে, তত দিন তাদের কাছে এফ-৩৫ বিক্রি সম্ভব নয়। এ কারণেই সাম্প্রতিক খসড়ায় এফ-৩৫ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ন্যাটো জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী হিসেবে তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে বাড়তি হুমকি মোকাবিলায় নিজেদের বিমান শক্তি জোরদার করতে চায়। ফলে এফ-১৬ ও সম্ভাব্য এফ-৩৫ কেনা আঙ্কারার জন্য এখন বড় অগ্রাধিকার।