যুক্তরাষ্ট্র এবার পুরো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সম্ভাব্য অপরাধের তদন্তকে কেন্দ্র করে এই পদক্ষেপকে প্রতিশোধমূলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে আদালতের দৈনন্দিন কার্যক্রম স্থবির হয়ে যেতে পারে। এর আগে মার্কিন প্রশাসন আইসিসির কয়েকজন বিচারক ও প্রসিকিউটরের ওপর ব্যক্তিগতভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, কিন্তু এবার পুরো প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করলে এটি একটি বড় ধরনের আন্তর্জাতিক উত্তেজনার কারণ হতে পারে।
এই বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত ছয়টি সূত্র জানিয়েছে, ‘এনটিটি স্যাংশন’ বা পুরো প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত খুব শিগগিরই ঘোষণা করা হতে পারে। আদালত ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলার জন্য জরুরি বৈঠক করেছে এবং কূটনৈতিক পর্যায়েও আলোচনার ব্যবস্থা চলছে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, পুরো আদালতকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে, তবে সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়নি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন যে, আইসিসি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নাগরিকদের ওপর ‘অযৌক্তিক এখতিয়ার’ দেখাচ্ছে। তিনি বলেছেন, যদি আদালত কাঠামোগত পরিবর্তন না আনে, তাহলে ওয়াশিংটন তাদের সেনা ও স্বার্থ রক্ষায় অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেবে।
যদি পুরো প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়, তাহলে কর্মীদের বেতন প্রদানে, ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারে এবং সফটওয়্যার চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটতে পারে। সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে আদালত ইতোমধ্যে ২০২৫ সালের বাকি মাসের বেতন আগাম পরিশোধ করেছে। পাশাপাশি বিকল্প ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও সফটওয়্যার সরবরাহকারীর সন্ধানও চলছে।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগভিত্তিক আইসিসি ইতোমধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট এবং হামাসের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধের অপরাধের অভিযোগ এনেছে।
এর আগে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের কর্মকাণ্ড তদন্তের কারণেও আদালতের কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আদালতের ১২৫টি সদস্যদেশের কয়েকটি দেশ আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের এই অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা ঠেকানোর চেষ্টা করবে। তবে সব ইঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছে, ওয়াশিংটন এবার তাদের আক্রমণ আরও বাড়াতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই আদালতকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘আইনের অপব্যবহারের হাতিয়ার’ বলে অভিহিত করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আদালত গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচার করার এখতিয়ার রাখে। তবে শর্ত হলো, অপরাধটি সদস্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে বা নাগরিক দ্বারা সংঘটিত হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই আদালতের সদস্য নয়। তবে আইসিসি ফিলিস্তিনকে সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সংঘটিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বিচারের এখতিয়ার রাখার দাবি করছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উভয়ই প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউস আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তিনি নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছিলেন। করিম খান বর্তমানে যৌন হয়রানির অভিযোগে তদন্তের মুখে ছুটিতে আছেন, যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।