বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। আগামী ২২ অক্টোবর বিকেলে নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি সফরের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি ১৮ অক্টোবর রাতে সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সেখানে পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে ২২ অক্টোবর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন এবং এক সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন। জানা গেছে, তার সফরসঙ্গী হিসেবে দলের কেউ থাকছেন না, কেবল ব্যক্তিগত সহকারী থাকবেন।
ডা. শফিকুর রহমানের এ সফরকে ঘিরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও একে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যক্তিগত সফর বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে এ সফরের পেছনে কৌশলগত গুরুত্ব নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে।
সফরসূচি অনুযায়ী, তিনি ২৪ অক্টোবর বাফেলো, ২৫ অক্টোবর মিশিগান এবং ২৬ অক্টোবর নিউইয়র্কে তিনটি পৃথক সংবর্ধনা ও মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন। এসব কর্মসূচি সরাসরি জামায়াতের ব্যানারে নয়, বরং বিভিন্ন প্রবাসী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। সফরকালে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
সূত্র জানায়, প্রবাসীদের অন্যতম দাবি ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে জামায়াত আমির ইতিপূর্বে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। এবারও তিনি প্রবাসীদের গণতান্ত্রিক অধিকার, বিশেষ করে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের আহ্বান জানাবেন। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রবাসীরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। নিউইয়র্কের এক কমিউনিটি নেতা বলেন, ডা. শফিকুর রহমান একজন সুশিক্ষিত ও সংযমী নেতা। তিনি সংঘাতের রাজনীতি এড়িয়ে সংলাপ ও মূল্যবোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। তার সফর প্রবাসীদের জন্য নতুন আশার বার্তা। জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাষ্ট্র শাখার মুখপাত্র ও নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নকিবুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, আমির সাহেবের এই সফর শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের অংশ। তার আগমনে ইতিমধ্যে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় জামায়াতের এই নতুন আন্তর্জাতিক যোগাযোগ কার্যক্রম দলটির কৌশলগত পুনর্গঠনেরই অংশ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে জামায়াতের সমর্থনভিত্তি আগের চেয়ে বিস্তৃত হয়েছে। তাই এই সফরকে অনেকে দল ও প্রবাসী নেতৃত্বের সম্পর্ক পুনর্গঠনের সূচনা হিসেবেও দেখছেন।
গত ১৯ জুলাই ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক সমাবেশে অসুস্থ হয়ে পড়েন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। পরে তিনি ৩৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং ২ আগস্ট তার ওপেন-হার্ট সার্জারি হয়। এরপর কিছুদিন তিনি বিশ্রামে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি আবার দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় হয়েছেন। অসুস্থতার পর এটিই তার প্রথম বিদেশ সফর। এর আগে তিনি চীন, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ডা. শফিকুর রহমানের এই যুক্তরাষ্ট্র সফরকে রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যময় বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এটি ব্যক্তিগত সফর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তবু অনেকেই মনে করছেন, এটি জামায়াতের আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও প্রবাসভিত্তিক সংগঠন পুনরুজ্জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।