Dark
Light
Today: October 15, 2025
September 13, 2025
15 mins read

বিএনপির জন্য সতর্কবার্তা ডাকসু নির্বাচন 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের নিরঙ্কুশ বিজয় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিশেষত বিএনপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই ফলাফল প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, ডাকসু ও জাকসুর এই নির্বাচন অনেকটাই অপ্রত্যাশিত ভোট বিপ্লবের ইঙ্গিত বহন করছে। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের প্রকাশ্য তৎপরতা দেখা না গেলেও গত বছরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তারা প্রকাশ্যে কমিটি গঠন শুরু করে। দেশের শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের এভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর।

ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন ইসলামী ছাত্র শিবির ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। গত বছরের জুলাই আগস্টের অভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় ছাত্ররা। ছাত্রদের এই আন্দোলনের অন্যতম অংশীদার ইসলামী ছাত্র শিবির। ফলে তাদের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর প্রভাব থেকে যায়। তাছাড়া, বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের মতো প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। এই ধরনের বহুবিধ কারণে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে বিকল্প কিছু ভাবনা করছে । সাধারনভাবে মনে করা হচ্ছে, বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হবে। কিন্তু গোপনে ব্যালট বিপ্লব হলে ভিন্ন ফল হলে তা এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করতে পারে। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিবেশি ভারতের জন্য তা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। কারণ জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানপন্থী দল। এই দলের সঙ্গে ভারতের মিলেমিশে থাকা কঠিন। পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগও তাই আগামী নির্বাচনে কোনও না কোনও ভূমিকা পালন করতে পারবে। এ সবই মূল প্রশ্ন। তবে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফল আগামী নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রভাব হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্যে সতর্কবার্তা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের সাড়ে পনেরো বছরের শাসনামলে সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র একবারই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই নির্বাচন ঘিরেও ছিল নানা বিতর্ক, নানা প্রশ্ন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ শাসনামলে ডাকসু কিংবা কোনো ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, যে কারণে অনেক বছর ধরে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা ভোটাধিকার চর্চার সুযোগ পাননি। আর সে কারণে গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন পটভূমিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেক বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “চব্বিশের আন্দোলন শুরু করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেই আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ কেউ এখন অর্ন্তর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদেও রয়েছেন। যে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ডাকসু নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার পর গত বছরের জুলাইয়ে আন্দোলন দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনই শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলছিলেন, বিশেষ করে দুইটি কারণে এবারের ডাকসু নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রথম কারণ অনেকদিন পরে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, দ্বিতীয়ত জুলাই পট পরিবর্তনের পর দেশের মানুষের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তার দুয়ার খুলে গেছে। যে কারণে এই নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরার একটা অংশ মনে করা হচ্ছে।
এখন থেকে প্রায় চার দশক আগে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলনে ডাকসু সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশের ক্রান্তিলগ্নেও ডাকসু নেতৃত্ব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দিয়েছে। যে কারণে ডাকসুর আবেদন ও গুরুত্ব সব সময় ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। ডাকসুতে ২৮টি পদের নির্বাচনে ৪৭১ প্রার্থীর মধ্যে ৬২ পদে প্রার্থী হয়েছেন ছাত্রীরা।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। ভিপি হওয়ার পর তিনি নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠন করেন। জুলাই আন্দোলনেও তার দলের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
এর আগে বিভিন্ন সময় ডাকসুর ভিপি, জিএস কিংবা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে বিজয়ীরা জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছেন। ঠিক সেই কারণেই রাজনৈতিক দলগুলো এবারকার ডাকসু নির্বাচনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ডাকসু নির্বাচনকে সারাদেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, এতে কোন সন্দেহ নেই। এই নির্বাচন কমবেশি জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করবেই”।

ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হতেই দেশের গণমাধ্যমগুলোতে নিয়মিত টকশো, আলোচনা ও বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতে থাকে। একইসঙ্গে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ধারা দেখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Previous Story

গুলি করে হত্যা ট্রাম্পের মিত্র চার্লি কার্ককে

Next Story

স্থায়ী বহিষ্কার বিএনপির ২ নেতাকে

Previous Story

গুলি করে হত্যা ট্রাম্পের মিত্র চার্লি কার্ককে

Next Story

স্থায়ী বহিষ্কার বিএনপির ২ নেতাকে

Latest from Blog

আলি আমজদের ঘড়িঘর

সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী , সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো সাক্ষী—আলি আমজদের ঘড়িঘর।যে ঘড়িঘর দিনের আলোয় সময় বলে, আর রাতে শহরের নিস্তব্ধতায় অতীতের গল্প শোনায়। বলা হয়,

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ২০২৫ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ বৈঠক

কিছু উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের কণ্ঠ রেকর্ডসহ প্রমাণ রয়েছে: তাহের

অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা প্রশাসনে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অনুগতদের বসিয়ে ‘পরিকল্পিত নির্বাচন’ আয়োজনের ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি দাবি করেছেন, এ ষড়যন্ত্রে

শাপলার পরিবর্তে নতুন প্রতীক নির্বাচনে এনসিপিকে সময়সীমা নির্ধারণ করল ইসি

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে দলটিকে শাপলার বিকল্প প্রতীক বেছে নিতে হবে। মঙ্গলবার

ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা

আওয়ামী লীগের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে, আর সেই অর্থ ব্যবহার করে তারা আসন্ন নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের সদস্যদের ঝটিকা মিছিলে অংশ নিতে প্রলুব্ধ করতে
Go toTop

Don't Miss

আলি আমজদের ঘড়িঘর

সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী , সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ২০২৫ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের