Dark
Light
Today: October 15, 2025
October 4, 2025
15 mins read

বাংলাদেশকে ঘিরে নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালের মানবপাচার বিষয়ক (টিআইপি) প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্তরে স্থান দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী অভিবাসনের চাপ ও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের মতো চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মানবপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের ধারাবাহিক ও দৃশ্যমান অগ্রগতিকে এই স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার এখনো মানবপাচার মোকাবিলার সর্বনিম্ন মান পুরোপুরি পূরণে সক্ষম হয়নি। তবে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় সরকার অধিকতর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং সামগ্রিক অগ্রগতিও স্পষ্ট। এই কারণেই বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে।

এছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তঃসংস্থা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে।

মানবপাচার ভুক্তভোগী শনাক্তকরণ ও সুরক্ষা সেবা জোরদার, সম্মুখ সারির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ বিস্তৃত করা এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম’ গ্রহণের উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসাও করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সরকার ১ হাজার ৪৬২ জন পাচারের শিকারকে শনাক্ত করেছে। শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ১৪৪ জন যৌনকর্মী হিসেবে পাচারের শিকার হয়েছে এবং ২৮৫ জনকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৩৩ জন অন্যান্য ধরনের পাচারের শিকার হয়েছে। পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে একই সময়ে ১ হাজার ২১০ জন ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করা হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের শনাক্ত করার পর সরকার তাদের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।মহিলা ও শিশুবিষয়ক, সমাজকল্যাণ, প্রবাসীকল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে এসব ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সহায়তা ও আশ্রয়ের সুযোগও দেওয়া হচ্ছে। সরকার সুশীল সমাজের সঙ্গে সমন্বয় করে ভুক্তভোগীদের সেবার ব্যাপারে পুলিশ, অভিবাসন কর্মকর্তা ও শ্রম পরিদর্শকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক মানবপাচারবিরোধী মানদণ্ডের সঙ্গে জাতীয় চর্চাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার মূল পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবপাচার নেটওয়ার্ক তদন্তে ইন্টারপোল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বৈশ্বিক অংশীজনদের সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান সহযোগিতার কথাও স্বীকার করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

পাচারবিরোধী পক্ষগুলোকে শক্তিশালী করার এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) মধ্যে সমন্বয় সুদৃঢ় করার জন্য সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার জাতীয় মানবপাচারবিরোধী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শক্তভাবে পাচার প্রতিরোধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাচার প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের জন্য এ বছর ৬২১ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৫ বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে। আগের বছরের তুলনায় এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের পাচারবিরোধী কমিটি বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় মুদ্রিত পত্রিকা, রেডিও এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। এভাবে প্রচারের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন, শ্রম অধিকার এবং প্রতারণামূলক নিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়- জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ১০৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে এবং বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রস্থান-পূর্ব প্রশিক্ষণ সেশন চালু করেছে। এর  মধ্যে নারী গৃহকর্মীদের জন্য ৩০ দিনের একটি বিশেষায়িত কোর্সও রয়েছে। বিদেশে আমাদের দেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকদের শোষণের ঝুঁকি কমানোই এসব পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য। সরকার মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো প্রধান গন্তব্যস্থলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি জোরদার করেছে। এছাড়া অভিবাসী শ্রমিকদের অতিরিক্ত ফি থেকে বাঁচানোর জন্য নিয়োগকর্তা প্রদত্ত নিয়োগ মডেল প্রতিষ্ঠা করেছে।

এতে বলা হয়- অভিবাসীদের ভবিষ্যত বিবেচনায় জাতীয় একটি নীতিও চালু করা হয়েছে। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য গৃহীত একটি সমন্বিত পরিকল্পনা এটি। পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরাও এর অন্তর্ভুক্ত, যেন প্রত্যাবর্তনের পর তারা জীবিকার সুযোগ পায়। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যাবাসন এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা সহজ করার জন্য ২০১৫ সালে ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে পাচারবিরোধী সমন্বয় জোরদার করার জন্য ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলমান সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা বাংলাদেশের মানবপাচার মোকাবিলায় দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রতিফলন। দ্বিতীয় স্তরে অবস্থান পাওয়া দেশের আইনের শাসন জোরদার, অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা এবং পাচারের শিকারদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রতি বাড়তি প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে। একই সঙ্গে সরকার মানবপাচার প্রতিরোধে কাঠামোগত উন্নয়নে ধারাবাহিক বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Previous Story

প্রধান উপদেষ্টাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে।

Next Story

আটলান্টিক সিটিতে টিম স্মলের পক্ষে জোরদার নির্বাচনী প্রচারণা চলছে

Previous Story

প্রধান উপদেষ্টাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে।

Next Story

আটলান্টিক সিটিতে টিম স্মলের পক্ষে জোরদার নির্বাচনী প্রচারণা চলছে

Latest from Blog

আলি আমজদের ঘড়িঘর

সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী , সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো সাক্ষী—আলি আমজদের ঘড়িঘর।যে ঘড়িঘর দিনের আলোয় সময় বলে, আর রাতে শহরের নিস্তব্ধতায় অতীতের গল্প শোনায়। বলা হয়,

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ২০২৫ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ বৈঠক

কিছু উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের কণ্ঠ রেকর্ডসহ প্রমাণ রয়েছে: তাহের

অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা প্রশাসনে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অনুগতদের বসিয়ে ‘পরিকল্পিত নির্বাচন’ আয়োজনের ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি দাবি করেছেন, এ ষড়যন্ত্রে

শাপলার পরিবর্তে নতুন প্রতীক নির্বাচনে এনসিপিকে সময়সীমা নির্ধারণ করল ইসি

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে দলটিকে শাপলার বিকল্প প্রতীক বেছে নিতে হবে। মঙ্গলবার

ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা

আওয়ামী লীগের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে, আর সেই অর্থ ব্যবহার করে তারা আসন্ন নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের সদস্যদের ঝটিকা মিছিলে অংশ নিতে প্রলুব্ধ করতে
Go toTop

Don't Miss

আলি আমজদের ঘড়িঘর

সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী , সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ২০২৫ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের