বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, পরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবির মতাদর্শের কর্মকর্তাদের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ তোলেন। এটি ছিল তথ্য উপদেষ্টা মাহবুব আলমের আগের দিনের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া।
রিজভী বলেন, “ফ্যাসিবাদের দোসররা প্রশাসনে আগে থেকেই আছে। এরপর যেসব তরুণ ছাত্রজীবনে শিবির করেছিল, পরে ক্যাডার সার্ভিসে ঢোকার সুযোগ পেয়েছে—তাদের মধ্যে অনেকে এখনও সেই মতাদর্শে বিশ্বাসী। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে পারে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যদি দলীয়ভাবে খুঁজে বের করে এদের মূল পদে বসানো হয় এবং তারা প্রভাব বিস্তার শুরু করে, তাহলে কখনোই একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রশাসনে পক্ষপাতদুষ্ট ক্যাডার বসানো হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবেই।”
তিনি বলেন, আজকে আমরা শুনি যে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব তিনি জামায়াতের লোক। তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে বলতে চাই, দীর্ঘদিন ধরে আপনারা যাকে জনপ্রশাসন সচিব করেছিলেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে তিনি (মোখলেসুর রহমান) গোঁড়া থেকেই একজন বিএনপিবিরোধী লোক ছিলেন। তিনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নামে একেবারে কিভাবে গুছিয়ে মিথ্যা মামলা সাজানো যায় সেটা তিনি করেছিলেন। তাকে আপনারা দীর্ঘদিন ওই পদে রেখেছিলেন। তিনি বা তারা খুঁজে খুঁজে যে ছেলেগুলো হয়তো ছাত্রজীবনে ছাত্রদল অথবা বিএনপি পরিবারের ছেলে তাদের দূরে রাখার কাজটি করেছেন। তাদের সব গুরুত্বহীন জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে, ওএসডি করে রেখেছে।’
তিনি বলেন, যে ইসলামপন্থি দলের কথা বললাম তাদের লোকদের সুচারুভাবে বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে। তাহলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা আসবেই। যেখানেই আমরা যাই সেখানে দেখতে পাচ্ছি, প্রশাসনের লোকদের মধ্যে সুর ভিন্ন রকম।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ছাত্রদল ব্যাকগ্রাউন্ডের জাকির হোসেনকে চুক্তিভিত্তিক নেওয়া হয়নি। আবদুর রউফকে পদায়ন করে আবার অতিরিক্ত সচিব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তরিকুল ইসলামকে গুরুত্বহীন জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে। তাহলে মাহফুজ সাহেবকে বলব, বিএনপি ও জামায়াত কামড়াকামড়ি করে কোথায় ছাত্রদল করত একসময় তারা বসেছে?
তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনে সেই ব্যক্তিদের দেখতে চাই, যাদের মধ্যে নিরপেক্ষতা আছে। ছাত্রজীবনে যে কেউ ছাত্র সংগঠন করতে পারে কিন্তু সে একটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সে রাষ্ট্রের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছে এবং জনগণের সেবক হিসেবে থাকবেন। জনগণের সেবকের তো কোনো রাজনৈতিক রং থাকতে পারে না।
রিজভী বলেন, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে বিশেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় কোনো ধরনের কারচুপি, কোনো ধরনের দলীয়করণের কোনো অভিযোগ ছিল না। বেগম খালেদা জিয়ার আমলে ১৯৯১-৯৬, ২০০১-২০০৬ এবং শহীদ জিয়াউর রহমানের আমলে।
তিনি বলেন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের সময়কালে বিসিএসকে (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) অনেকে ঠাট্টা করে ‘বিটিএস’ (বাংলাদেশ তোফায়েল সার্ভিস) বলতেন। প্রশাসনকে দলীয়করণের এ প্রক্রিয়া আসলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি। সেখান থেকে রাষ্ট্রকে ধীরে ধীরে সুশৃঙ্খল কাঠামোয় রূপ দেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও তার দুই মেয়াদে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা অটুট রাখেন। তখন উচ্চপর্যায়ের পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ কেউই তুলতে পারেনি। কিন্তু গত ১৬–১৭ বছর ধরে প্রশাসনে যে ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে, তার সুস্পষ্ট প্রমাণ সবাই দেখেছে। সাংবাদিকরাই প্রত্যক্ষ করেছেন, কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলীয় কর্মকর্তারা বিএনপি নেতাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, পাহাড়ি এলাকায় অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে, গার্মেন্টস খাতেও অশান্তির ইঙ্গিত মিলছে। এসব হঠাৎ ঘটছে না, বরং মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এগুলো নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এর পেছনে একটি চক্র সক্রিয়। তাই আমাদের প্রত্যেককে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং দৃঢ়ভাবে সেই দেশবিরোধী চক্রের অশুভ পরিকল্পনা প্রতিহত করতে হবে। সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে যেন কোনো মাস্টার প্ল্যান বা গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়িত হয়ে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান বা গণতন্ত্র বিনাশের চেষ্টা সফল না হয়।