Dark
Light
Today: October 16, 2025
September 28, 2025
13 mins read

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, মিয়ানমারের চলমান সংঘাত পুরো অঞ্চলের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

মিয়ানমারে চলমান সংঘাত পুরো অঞ্চলের জন্য গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এই সংঘাত কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে না, বরং বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনও কঠিন করে তুলেছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বাংলায় ভাষণ শুরু করেন এবং এসব মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আট বছর পার হলেও রোহিঙ্গা সংকটের কোনো স্থায়ী সমাধান দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু, বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হচ্ছে। সাংস্কৃতিক পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি রোহিঙ্গাদের অধিকার বঞ্চনা ও নির্যাতন অব্যাহত রাখায় প্রধান কারণ।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রান্তিকীকরণের প্রক্রিয়া আর চলতে দেওয়া যাবে না। বর্তমান বৈষম্যমূলক নীতি ও কর্মকাণ্ডের সমাধান এবং প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া এখনই সম্ভব, এবং এর জন্য পূর্ণাঙ্গ জাতীয় রাজনৈতিক মীমাংসার অপেক্ষা করতে হবে না। রাখাইনের সমস্যাগুলোর চূড়ান্ত রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য, তবে এর জন্য অঞ্চলের সব জাতিসত্তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গারা সমঅধিকার ও নাগরিকত্বসহ সমাজের অংশ হতে পারে।

ড. ইউনূস আরও বলেন, এই সংকটের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা, আর পরবর্তী বৃহত্তম ভুক্তভোগী হলো বাংলাদেশ। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়। বাংলাদেশ দায়িত্বশীল প্রতিবেশী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে মানবিক দায়বদ্ধতা পালন করছে।

ড. ইউনূস বলেন, তহবিল সংকটের কারণে আজকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ন্যূনতম জীবনমান বজায় রাখার আমাদের যৌথ প্রয়াসও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তাদের জরুরি সহায়তা কার্যক্রমে মারাত্মক তহবিল ঘাটতির বিষয়ে ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে। অবিলম্বে নতুন তহবিল না এলে, মাসিক রেশন অর্ধেকে নামিয়ে এনে মাথাপিছু মাত্র ৬ মার্কিন ডলারে নামতে পারে, যা রোহিঙ্গাদের অনাহার ও অপুষ্টিতে নিমজ্জিত করবে, যা তাদের আগ্রাসী কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে। তহবিলের অতিরিক্ত কাটছাঁট হলে তা নিঃসন্দেহে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি করবে, যা ক্যাম্পের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই আমি বিদ্যমান দাতাদের সাহায্য বাড়াতে এবং সম্ভাব্য নতুন দাতাদের অনুদান প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে এ বিপর্যয়কর পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

তিনি বলেন, মানবিক সহায়তার জন্য নতুন ও বর্ধিত তহবিলের বাইরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমার সরকার বা রাখাইনের অন্যান্য অংশীদারদের উপর ইতিবাচক পরিবর্তন ও দ্রুত রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে। অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোকেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে কোনো যৌথ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ সদাপ্রস্তুত।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করি, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন বিশ্বব্যাপী দৃঢ় সংকল্প তৈরি করবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য বাস্তবসম্মত আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করবে, যেখানে তহবিল সংগ্রহ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিকভাবে একটি রোডম্যাপ গৃহিত হবে এবং সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, শুধু মিয়ানমার নয়, এ বছর, আমরা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রান্তেই সংঘাত প্রত্যক্ষ করেছি— ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে আমরা বাস করি। বিশ্বের আর কোনো অঞ্চলেই এত সংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র এত অল্প দূরত্বে অবস্থান করছে না। তাই নিরস্ত্রীকরণ ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তাররোধের গুরুত্ব আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা সময়ের সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়া বৈশ্বিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমরা পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের যে অধিকার প্রতিটি দেশের রয়েছে তার প্রতি সমর্থন জানাই।

তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে, আমাদের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার আগেই, এই বছর, আমরা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার আওতাধীন পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত যৌথ কনভেনশন-এ যোগদান করেছি। এই যোগদানের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মানের পারমাণবিক নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার প্রতি আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Previous Story

পাচারকৃত সম্পদ ফেরত দিতে ড. ইউনূসের দাবি

Next Story

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির পক্ষে অবস্থান নিলেন বারাক ওবামা

Previous Story

পাচারকৃত সম্পদ ফেরত দিতে ড. ইউনূসের দাবি

Next Story

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির পক্ষে অবস্থান নিলেন বারাক ওবামা

Latest from Blog

হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা আবারও বাড়ানো হয়েছে

হজযাত্রীদের নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশেষ বিবেচনায় সরকারি ও বেসরকারি উভয় কোটাের হজযাত্রী

আলি আমজদের ঘড়িঘর

সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী , সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো সাক্ষী—আলি আমজদের ঘড়িঘর।যে ঘড়িঘর দিনের আলোয় সময় বলে, আর রাতে শহরের নিস্তব্ধতায় অতীতের গল্প শোনায়। বলা হয়,

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ২০২৫ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ বৈঠক

কিছু উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের কণ্ঠ রেকর্ডসহ প্রমাণ রয়েছে: তাহের

অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা প্রশাসনে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অনুগতদের বসিয়ে ‘পরিকল্পিত নির্বাচন’ আয়োজনের ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি দাবি করেছেন, এ ষড়যন্ত্রে

শাপলার পরিবর্তে নতুন প্রতীক নির্বাচনে এনসিপিকে সময়সীমা নির্ধারণ করল ইসি

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে দলটিকে শাপলার বিকল্প প্রতীক বেছে নিতে হবে। মঙ্গলবার
Go toTop

Don't Miss

হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সীমা আবারও বাড়ানো হয়েছে

হজযাত্রীদের নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত। মঙ্গলবার

আলি আমজদের ঘড়িঘর

সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী , সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর