সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী ,
সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও সময়কাল
পীর বদর শাহ (বদর আউলিয়া / বদর পীর) চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক সুফি-সাধকদের মধ্যে অন্যতম। সাধারণ ধারনা ও ঐতিহাসিক প্রচলন অনুযায়ী তাঁর কার্যক্রম ১৪শ শতকের কাছাকাছি—চট্টগ্রামে ইসলামের প্রচারে যখন সুফি পীরদের ভূমিকা প্রবল ছিল।

আগমন-কাহিনী (লোককথা ও ইতিহাসের মিল)
- লোককথা (প্রচলিত কাহিনী) — স্থানীয় জনশ্রুতি বলে, পীর বদর সমুদ্রপথে এসে এক পাথরের উপর ভেসে নোঙ্গর করেন; তাঁর সঙ্গে একগুচ্ছ সহচর (কাহিনীতে মোট বারো আউলিয়ার অংশ হিসেবে উল্লেখ আছে) চট্টগ্রামে আসেন। তিনি একটি চাটি/চেরাগ জ্বালিয়ে (কখনও চাটির আলো বলা হয়) ভূত-প্রেত ও জ্বীন-পরীদের তাড়িয়ে দিয়ে স্থানীয় মানুষের মুক্তি দেন—এ উপলক্ষেই চাটিগাঁ/চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি সম্পর্কে স্থানীয় একটি লোককথাও আছে।
- ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট (সম্ভাব্য বাস্তবতা) — লোককথার ‘জ্বীন-পরী’র রূপকে গবেষকরা উপমারূপে ব্যাখ্যা করেন; বাস্তবে চট্টগ্রাম তখন মগ-দস্যু/বিভিন্ন উপজাতীয় ও সামরিক চাপের মুখে ছিল। কিছু সূত্র উল্লেখ করে যে, মধ্যযুগে (মুবারক শাহের শাসনকালে, ১৩৩৮–১৩৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে) সেনাপতি কদল খান গাজীর সহায়তায় শাহ বদরুদ্দীন (বদর পীর) ও তাঁর সহকর্মীরা মগ-দস্যুদের পরাজিত করে চট্টগ্রামে মুসলিম শাসন ও স্থায়ী বসতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিলেন—অর্থাৎ লোককথা ও রাজনৈতিক/সামরিক ইতিহাসের মিশ্রণ থেকেই বদর পীরের কাহিনী গঠিত।
মাজার (দরগাহ) — অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য
বদর আউলিয়ার মাজার চট্টগ্রাম শহরের পুরনো স্থাপনার মধ্যে একটি; প্রচলিতভাবে বকশির হাট (Badarpati Road এলাকার) কাছাকাছি উল্লেখ করা হয়—ওই এলাকায় মাজার ও সংশ্লিষ্ট মসজিদ/ছোট দরগাহ আছে। (মেপ/স্থানিক মানচিত্র সূত্রে মাজারের জিওকোঅর্ডিনেট পাওয়া যায়)।
কিছু গবেষণায় ও দর্শনীয় বর্ণনায় বলা আছে যে মাজারে একটি কাচের কেসে সেই “পাথরের ভাঙা অংশ” বা পাথরের কিছু অংশ রাখা আছে, যার সঙ্গে বদর পীরের সমুদ্রপাড়ি দিয়ে আগমনের লোককথা জড়িত। মাজারটি স্থানীয়দের ভক্তিপূর্ণ বন্দোবস্ত—উৎসর্গ, দরস (দর্শন) ও উরস/বরকতমেলা ইত্যাদি অনুষ্টিত হয়।
লোকাচার ও স্থানীয় বিশ্বাস
চট্টগ্রামের লোকজীবনে বদর পীরকে ‘গার্ডিয়ান সেন্ট’ হিসেবে দেখা হয়; তাঁকে বারো আউলিয়ার একজন বলা হয় — এই বারো আউলিয়া (Bara Auliyar Desh) সম্পর্কিত ধারনাও চট্টগ্রামের লোকসাহিত্যে প্রচলিত।
“চাটিগাঁ/চট্টগ্রাম” নামে শহরের নামের উৎপত্তি সংক্রান্ত গল্পে বদর পীরের চাটি/চেরাগের কথাটি স্থান পেয়েছে; তবে ভাষাবিজ্ঞানি ও ইতিহাসে নামের উৎপত্তি নিয়ে ভিন্ন মতও আছে — লোককথা ঐতিহ্যের অংশ।
সংযোজনীয় নোট (রণনীতি ও ইতিহাসে সতর্কতা)
এই কাহিনী-সংকলনে লোককথা, স্থানীয় প্রথা এবং কিছু ঐতিহাসিক সূত্র মিশে আছে। সরাসরি প্রামাণ্য সময়পঞ্জি (primary archival document) সীমিত—তাই লোকমুখে প্রচলিত কাহিনীকে ঐতিহাসিকভাবে ব্যাখ্যা করা হলে তাঁর একটি সাংস্কৃতিক/সামাজিক ভুমিকাই সবচেয়ে দৃশ্যমান। উল্লেখিত পয়েন্টগুলো মধ্যে কিছু অংশ লোককথা; কিছু অংশ বিশ্ববিদ্যালয়/গবেষণামূলক আলোচনা সমর্থিত।