তামিল সুপারস্টার ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল ‘তামিলাগা ভেট্ট্রি কাজাগম’ (টিভিকে)-এর প্রতিষ্ঠাতা থালাপতি বিজয়ের এক সমাবেশে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। উঠছে প্রশ্ন—এই মর্মান্তিক ঘটনার দায় কার, কাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, আর বিজয় কি গ্রেপ্তার হতে পারেন?
তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দায়ের হওয়া মামলার এফআইআরে বিজয়ের নাম নেই। অভিযুক্ত করা হয়েছে মূলত টিভিকে-র দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতাদের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শাসক দল ডিএমকে অত্যন্ত সতর্ক কৌশল নিয়েছে। কারণ, বিজয়ের বিপুল জনপ্রিয়তা বিবেচনায় তার বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া রাজনৈতিকভাবে উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে।
শনিবার রাতেই করুর টাউন থানায় মামলা করা হয় টিভিকে-র করুর পশ্চিম জেলার সম্পাদক ভি. পি. মথিয়াঝাগনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অবহেলায় প্রাণহানি, জননিরাপত্তা বিপন্ন করা ও সরকারি নির্দেশ অমান্যসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। পরদিন মামলায় আরও যুক্ত হন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এন আনন্দ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটিআর নির্মলকুমার। তবে বিজয় বা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আদাভ অর্জুনার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলমান রয়েছে। প্রমাণ মিললে অন্যদের নামও এফআইআরে যোগ করা হতে পারে। আর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজয়কে সরাসরি অভিযুক্ত করলে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি তার দিকে ঝুঁকতে পারে, যা টিভিকে-র জন্য রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হয়ে উঠতে পারে।
সরকার ইতোমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্ট বিচারপতি অরুণা জগদেসানকে প্রধান করে একক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। পাশাপাশি, সোমবার থেকে মাদ্রাজ হাইকোর্টে স্বপ্রণোদিত শুনানি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘটনার পরপরই বিজয় দ্রুত করুর ছেড়ে যান এবং রোববার এক বিবৃতিতে নিহত পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি ঘোষণা দেন, নিহত প্রত্যেক পরিবারের জন্য ২০ লাখ রুপি এবং আহতদের জন্য ২ লাখ রুপি আর্থিক সহায়তা দেবেন। তার ভাষায়, “এ ক্ষতি কোনো অর্থে পূরণযোগ্য নয়। তবে আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে পাশে দাঁড়ানো আমার দায়িত্ব।”
তবে ঘটনাস্থলে ফিরে না যাওয়া এবং প্রত্যক্ষভাবে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে দেখা না করায় তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
টিভিকে নেতারা ইতোমধ্যে সিবিআই বা বিশেষ তদন্ত টিম গঠনের দাবি তুলেছেন। পাশাপাশি, মাদ্রাজ হাইকোর্টে একাধিক আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে কিছুতে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করার অনুরোধ করা হয়েছে। রোববার বিকেলে একটি শুনানি তালিকাভুক্ত হলেও পরে তা স্থগিত করা হয়। সোমবার মাদুরাই বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
ঘটনায় কংগ্রেস, বিজেপি ও আঞ্চলিক দলগুলোর নেতাদের প্রতিক্রিয়া এসেছে। বিদুতলাই চিরুথাইগাল কাচ্চির নেতা থোল থিরুমাভালাভান বলেছেন, “মানুষ রাজনীতিককে নয়, চলচ্চিত্র তারকাকে দেখতে ভিড় করেছিল। সিনেমার প্রতি এই অন্ধ মোহ এখন বেদনাদায়ক।”
অভিনেতা-রাজনীতিক কমল হাসান এটিকে ‘হৃদয়বিদারক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি নাইনার নাগেন্দ্রন নিহতদের পরিবারকে সাহায্য করতে স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সরকারকে দায়ী করেছেন।
রোববার সন্ধ্যায় বিচারপতি জগদেসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন কমিশনকে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮১ জন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সব মিলিয়ে, করুরের মর্মান্তিক পদদলিত ঘটনায় দায়-দায়িত্ব ও রাজনৈতিক কৌশল ঘিরে উত্তাপ ছড়ালেও ডিএমকে সরকার আপাতত সরাসরি বিজয়কে আঘাত না করে আদালত ও তদন্ত কমিশনের ওপর ভরসা করছে।