তিনি একসময় ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা রেস্তোরাঁ কোম্পানি অ্যাপলবিসের প্রেসিডেন্ট। শর্ত ছিল—প্রতিষ্ঠানটিকে যদি লাভজনক করতে পারেন, তবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে বসানো হবে তাঁকে। সেই চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করেছিলেন। অক্লান্ত পরিশ্রম আর দূরদর্শী নেতৃত্বে অ্যাপলবিসকে তিনি ঘুরে দাঁড় করান, কোম্পানি ফিরে যায় লাভের ধারায়। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রাখেনি কর্তৃপক্ষ। সিইও বানানোর বদলে তাঁকে উপেক্ষা করা হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটি ছাড়েন।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এক দশক পর নিজেই কিনে নেন সেই অ্যাপলবিসকে—আর এভাবেই নেন এক মধুর প্রতিশোধ।
এই কাহিনি যুক্তরাষ্ট্রের সফল করপোরেট ব্যক্তিত্ব জুলিয়া স্টুয়ার্টের। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ম্যাথিউস মেন্টালিটি নামের এক পডকাস্টে ৭০ বছর বয়সী এই নারী নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বলেন, “অ্যাপলবিসের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি নতুন দল গড়েছিলাম, পরিকল্পনা সাজিয়েছিলাম, দিনরাত পরিশ্রম করেছিলাম। তিন বছরের মধ্যে অ্যাপলবিস ঘুরে দাঁড়ায়, শেয়ারের মূল্য দ্বিগুণ হয়ে যায়।”
এ অবস্থায় জুলিয়া একদিন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বোর্ডরুমে ঢোকেন। হাতে ছিল গ্রাফ, সাফল্যের চার্ট। ভেবেছিলেন, স্বপ্ন ছোঁয়ার সময় এসেছে। কিন্তু সামনে বসা চেয়ারম্যান সোজাসাপটা বলে দিলেন, ‘না, কখনোই না।’
এই ‘না’-তে ধাক্কা খেয়েছিলেন জুলিয়া। কিন্তু ভেঙে পড়েননি। বরং এই ‘না’ তাঁকে নতুন মানুষে পরিণত করে। নতুন পথের নকশা বুনলেন। যোগ দিলেন নতুন প্রতিষ্ঠানে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এভাবেই প্রচণ্ড চাপে সময় পার করছিলেন জুলিয়া।
অ্যাপলবিস ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন মানসম্মত খাবারের জন্য বিখ্যাত আরেক রেস্তোরাঁ ইন্টারন্যাশনাল হাউস অব প্যানকেকসে (আইএইচওপি)। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা তখন খুব শোচনীয় ছিল। পাঁচ বছরের মধ্যে আইএইচওপিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন জুলিয়া। এরপর তাঁর মাথায় নতুন বুদ্ধি এল।
জুলিয়া আইএইচওপি কর্তৃপক্ষকে বললেন, ‘আমাদের আরেকটি ব্র্যান্ড কিনতে হবে, না হলে ঝুঁকি আছে।’ অনেক চিন্তাভাবনার পর অ্যাপলবিস কেনার সিদ্ধান্ত হয়। ২০০০ সালে ২৩০ কোটি ডলারে অ্যাপলবিস কিনে নেয় আইএইচওপি। এ যেন শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য নয়, একপ্রকার মধুর প্রতিশোধও।
চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর জুলিয়া অ্যাপলবিসের সেই পুরোনো চেয়ারম্যানকে ফোন করে শান্ত কণ্ঠে বললেন, ‘এখন আর দুজন নেতার দরকার নেই। আপনাকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে।’ এ সাফল্যের জন্য জুলিয়াকে দুই দশক অপেক্ষা করতে হয়েছে।
পরবর্তী সময়ে জুলিয়া আরেক রেস্তোরাঁ কোম্পানি ডাইন ব্র্যান্ডস গ্লোবালের চেয়ারম্যান ও ডাইনইকুইটি ইনকরপোরেশনের সিইও হিসেবে এক দশক চাকরি করেন। বর্তমানে তিনি ফাস্ট ফুড চেইন বোজ্যাংগলস-সহ বিভিন্ন কোম্পানির বোর্ড সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তিনি নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা। স্বাস্থ্য ও সুস্থতাবিষয়ক একটি অ্যাপেরও প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়া স্টুয়ার্ট।