Dark
Light
Today: October 15, 2025
October 11, 2025
13 mins read

ডিজিএফআইয়ের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি নির্দেশ

আয়নাঘরের ঘটনায় গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’র পাঁচ সাবেক মহাপরিচালকসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তারা বছরের পর বছর সাধারণ মানুষকে অবৈধভাবে আটক রেখে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ২২ অক্টোবর অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে গত বুধবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ডিজিএফআই’র সাবেক পাঁচ মহাপরিচালক, পুলিশের সাবেক আইজি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮ কর্মকর্তা।

জেআইসিভুক্ত দুই মামলার অভিযুক্ত ১৩ জনের মধ্যে আছেন— শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদীন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, সিটিআইবির সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক।

ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুযায়ী, মামলার আসামিরা সরকারি কোনো পদে আর বহাল থাকতে পারবেন না।

পরোয়ানা পাওয়া অভিযুক্তদের মধ্যে ডিজিএফআই, র‌্যাব, সিটিআইবিতে কাজ করা কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন তিনজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল, পাঁচজন মেজর জেনারেল, ছয়জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, তিনজন কর্নেল এবং পাঁচজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তা। অভিযুক্তদের মধ্যে ২৩ জনই সামরিক কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ১১ জন এখনো সশস্ত্র বাহিনীতে বর্তমানে কর্মরত। এছাড়া আছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এসব আসামিকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির ও শুনানির জন্য আগামী ২২ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
অপরদিকে টিএফআইয়ের সঙ্গে যুক্ত ১৭ অভিযুক্তের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, ব্যারিস্টার হারুন-অর-রশিদ, র‌্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল কেএম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহাবুব আলম ও কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, র‌্যাবের সাবেক পরিচালক (ইন্টেলিজেন্স উইং) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।
ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেনÑ বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আবেদনের শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হুসাইন তামিম। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেনÑজামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মরহুম গোলাম আযমের ছেলে গুমের শিকার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান, মরহুম বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমান, মাইকেল চাকমা প্রমুখ।
ট্রাইব্যুনালে আবেদনের পক্ষে চীফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, গুম, গোপন বন্দিশলায় আটক, নির্যাতন, হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এই আসামিরা। তারা বাংলাদেশে এক ভয়াল পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলো।
ট্রাইব্যুনালে দেওয়া বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তির হাত কেটে ফেলা, নখ উপড়ে ফেলা, ঘূর্ণয়মান চেয়ারে বসিয়ে কিংবা ইলেকট্রনিক শক দিয়ে লোমহর্ষক নির্যাতন করা হতো। এছাড়া গুমের শিকার বন্দিদের আলাদা ‘কোড নেম’ ছিল। বিশেষ বন্দিদের ডাকা হতো ‘মোনালিসা’ নামে আর গুম ঘরকে বলা হতো ‘আর্ট গ্যালারি’, যা পরে ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিতি পায়। অন্যদিকে গোপন বন্দিশালাগুলোকে ‘হাসপাতাল’ বা ‘ক্লিনিক’ নামে ডাকা হতো আর গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের বলা হতো ‘সাবজেক্ট’।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Previous Story

টেনেসির সামরিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, বহু হতাহত

Next Story

শহিদুল আলম দেশে ফেরেন, জানালেন গাজাবাসী এখনও স্বাধীন হয়নি।

Previous Story

টেনেসির সামরিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, বহু হতাহত

Next Story

শহিদুল আলম দেশে ফেরেন, জানালেন গাজাবাসী এখনও স্বাধীন হয়নি।

Latest from Blog

আলি আমজদের ঘড়িঘর

সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী , সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো সাক্ষী—আলি আমজদের ঘড়িঘর।যে ঘড়িঘর দিনের আলোয় সময় বলে, আর রাতে শহরের নিস্তব্ধতায় অতীতের গল্প শোনায়। বলা হয়,

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ২০২৫ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ বৈঠক

কিছু উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের কণ্ঠ রেকর্ডসহ প্রমাণ রয়েছে: তাহের

অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা প্রশাসনে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অনুগতদের বসিয়ে ‘পরিকল্পিত নির্বাচন’ আয়োজনের ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি দাবি করেছেন, এ ষড়যন্ত্রে

শাপলার পরিবর্তে নতুন প্রতীক নির্বাচনে এনসিপিকে সময়সীমা নির্ধারণ করল ইসি

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে দলটিকে শাপলার বিকল্প প্রতীক বেছে নিতে হবে। মঙ্গলবার

ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা

আওয়ামী লীগের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে, আর সেই অর্থ ব্যবহার করে তারা আসন্ন নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের সদস্যদের ঝটিকা মিছিলে অংশ নিতে প্রলুব্ধ করতে
Go toTop

Don't Miss

আলি আমজদের ঘড়িঘর

সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী , সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ২০২৫ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের