Dark
Light
Today: October 15, 2025
September 19, 2025
18 mins read

জামায়াতসহ সাত দলের আন্দোলন, টার্গেট বিএনপি?

একই সময় নির্বাচন ও জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্তত সাতটি রাজনৈতিক দল রাজপথে সক্রিয় হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোট গঠনের ঘোষণা নেই, তবু বিএনপির বিপক্ষে তাদের একধরনের সমন্বিত অবস্থান তৈরি হচ্ছে কি না—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

মাঠে থাকা দলগুলোর মধ্যে কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলও রয়েছে, আর তাদের দাবিগুলোও অনেকাংশে মিল রয়েছে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন, আনুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে ভোট, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, আওয়ামী লীগের বিচার এবং জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার মতো দাবিতে তারা একই দিনে কর্মসূচি পালন করছে।

হঠাৎ করেই রাজপথে নেমে পড়ার এই প্রবণতা নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে।

এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে বিএনপির অবস্থান ভিন্ন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে–বিএনপির বিপরীতে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর একটা শক্তিকে কি দৃশ্যমান করার চেষ্টা হচ্ছে?

আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলছে যে দলগুলো, তারা যদিও এই জোট করার দাবি খারিজ করে দিয়েছে, তবে বিএনপি এর পেছনে ‘অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা’ দেখছে।

আবার রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে রাজপথে সংঘাতের সূচনা হতে পারে কি না, সে আশঙ্কাও করছেন অনেকে। কারণ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আন্দোলনে নামার উদ্যোগ এবারই প্রথম।

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলছে। এরমধ্যেই আন্দোলন কী বার্তা দিচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। আলোচনার টেবিলে যখন সমাধান হচ্ছে না, তখন দরকষাকষির টেবিলে আন্দোলনের চাপ হয়তো বাড়তি সুবিধা দিতে পারে জামায়াত ও সমমনা দলগুলোকে। ফলে এই পরিস্থিতি বিএনপির জন্যও একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলেই অনেকে মনে করেন। আবার রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।

জামায়াত এবং অন্যান্য দলগুলোর যে আন্দোলন, দৃশ্যত সেটা সরকারের উদ্দেশ্যে হলেও এর মূল বিরোধ কিংবা দ্বন্দ্ব মূলত বিএনপির সঙ্গে। ফলে আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্নটা আসছে বিএনপির দিক থেকেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন,
‘আপনি যা চান তা অন্য দলকে জোর করে করাতে পারবেন না। এখানে কাউকে বাধ্য করার সুযোগ নেই। রাস্তায় নেমে যদি জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে চান, তাহলে সেটা জনগণের ওপর আস্থার ঘাটতিরই প্রমাণ।’

এছাড়া বিএনপির মতে, ঐকমত্য কমিশনে যখন আলোচনা চলছে, তখন রাজপথে আন্দোলনের পেছনে ‘ভিন্ন উদ্দেশ্য’ কাজ করছে।

আমির খসরু বলেন, ‘এখানে সাংবিধানিকভাবে কী করা যায় সেটা তো আলোচনায় আছে। আলোচনায় থাকা অবস্থায় যদি কেউ কর্মসূচি দেয় তখন তো সেটার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’

‘ঐকমত্যের প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে কেউ যদি রাস্তা অবরোধ করতে চায়, মবোক্রেসি করতে চায়, জোর করে আদায় করতে চায় তাহলে তো এটা ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে একটা অরাজনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছে’, যোগ করেন তিনি।

জামায়াতসহ অন্যান্য দলগুলো যে আন্দোলন শুরু করেছে সেখানে সাতটি রাজনৈতিক দলকে দেখা যাচ্ছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফতে মজলিসের দুটি অংশ, নেজামে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা।

দলগুলো যেসব দাবিতে সরকারকে চাপ দিতে রাজপথে নেমেছে সেগুলো নিয়ে বিরোধিতা হচ্ছে মূলত বিএনপির সঙ্গে। কারণ জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতিতে ভোট, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার মতো বিষয়গুলোতে ভিন্নমত আছে বিএনপির।

দলটির মতে, যেসব বিষয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি, সেসব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠে গিয়ে জনগণের রায় নিতে হবে। আর সংস্কারের যেসব প্রস্তাব ঝুলে থাকবে, সেগুলো পরবর্তী সংসদে আলোচনায় আনা যাবে।

বিএনপি স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা পিআর পদ্ধতি কিংবা এ বিষয়ে গণভোট—কোনোটির পক্ষেই নয়। একইভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নেও তারা নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে চায়, কারণ তাদের মতে কোনো দল নিষিদ্ধ হবে কি না, সেটা আদালতের বিষয়।

তবে এসব ইস্যুতেই বিভিন্ন ইসলামী দল সাম্প্রতিক সময়ে একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছে এবং রাজপথে কর্মসূচিও পালন করেছে।

সবকিছু ঘটছে এমন এক সময় যখন সরকার ঘোষিত নির্বাচনের বাকি পাঁচ মাসেরও কম। এর মানে, তিন মাস পরই নির্বাচন কমিশনকে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। কিন্তু ওই নির্বাচনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

অনেকেই মনে করছেন, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে মূলত বিএনপির বিপরীতে একটা বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের দৃশ্যমান করতে চাইছে। অর্থাৎ আন্দোলনের মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক জোট গড়া, যার টার্গেট বিএনপি।

যদিও বিএনপিকে টার্গেট করে জোটের চেষ্টা হচ্ছে, এমন দাবি নাকচ করছে জামায়াত। দলটি বলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কোনো জোট গঠন করেননি। দলগুলো ‘নিজেদের মতো করে’ কর্মসূচি পালন করছে। এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও কোনো জোট নয়।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন কারও বিরুদ্ধে নয়। আমরা জনগণের পক্ষে আন্দোলন করছি। আমরা সংস্কারের আইনি ভিত্তি চাই, এই সরকারের আমলে বাস্তবায়ন চাই, তার ভিত্তিতে নির্বাচন চাই। এই দাবিগুলোতেই আমরা এক হয়েছি। এছাড়া পিআরসহ আরও বিষয় আছে। সামনে আরও অনেক দল এখানে আসবে।’

জামায়াতসহ দলগুলো বলছে, সরকার একটি ‘বিশেষ দলের দিকে ঝুঁকে’ আছে। ফলে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সমাধান আসছে না। এর জন্যই আন্দোলনের দিকে যেতে হচ্ছে।

হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে টেবিলে সমাধান না পেয়েই তো আমরা রাজপথে এসেছি।’

বিএনপি যেটা চাইছে, তার বিপরীতে যখন রাজপথে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তখন দলটি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে—সেটি এখন আলোচনার বিষয়। তবে জানা গেছে, বিএনপি পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে নয়। অর্থাৎ দলটির প্রতিক্রিয়া মাঠের কর্মসূচি নয়, বরং বক্তব্য ও বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

বিএনপি মনে করছে, পাল্টা কর্মসূচি দিলে পরিস্থিতি সংঘাতমুখর হয়ে উঠতে পারে এবং রাজনৈতিক পক্ষগুলো সরাসরি মুখোমুখি হতে পারে। এতে অস্থিরতা তৈরি হলে নির্বাচনও অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে—এমন আশঙ্কা রয়েছে দলটির ভেতরে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দলটি এখন সম্পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে। তার ভাষায়, ‘আমাদের এখন একটাই কর্মসূচি—নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। মনোনয়ন, প্রার্থী চূড়ান্তকরণসহ সব প্রস্তুতি চলছে। এর বাইরে আর কোনো কর্মসূচির প্রয়োজন নেই। আমরা তো রাস্তায় নেমে অবরোধ করব না, মবক্রেসি করব না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Previous Story

আন্দোলন কর্মসূচি গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়: মির্জা ফখরুল

Next Story

৪ আগস্ট আমরা ড. ইউনূসকে সরকার প্রধানের প্রস্তাব দিই

Previous Story

আন্দোলন কর্মসূচি গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়: মির্জা ফখরুল

Next Story

৪ আগস্ট আমরা ড. ইউনূসকে সরকার প্রধানের প্রস্তাব দিই

Latest from Blog

আলি আমজদের ঘড়িঘর

সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী , সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো সাক্ষী—আলি আমজদের ঘড়িঘর।যে ঘড়িঘর দিনের আলোয় সময় বলে, আর রাতে শহরের নিস্তব্ধতায় অতীতের গল্প শোনায়। বলা হয়,

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ২০২৫ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ বৈঠক

কিছু উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের কণ্ঠ রেকর্ডসহ প্রমাণ রয়েছে: তাহের

অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা প্রশাসনে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অনুগতদের বসিয়ে ‘পরিকল্পিত নির্বাচন’ আয়োজনের ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি দাবি করেছেন, এ ষড়যন্ত্রে

শাপলার পরিবর্তে নতুন প্রতীক নির্বাচনে এনসিপিকে সময়সীমা নির্ধারণ করল ইসি

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে দলটিকে শাপলার বিকল্প প্রতীক বেছে নিতে হবে। মঙ্গলবার

ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা

আওয়ামী লীগের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে, আর সেই অর্থ ব্যবহার করে তারা আসন্ন নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের সদস্যদের ঝটিকা মিছিলে অংশ নিতে প্রলুব্ধ করতে
Go toTop

Don't Miss

আলি আমজদের ঘড়িঘর

সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী , সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ২০২৫ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের