ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটিতে ইসরায়েলের তীব্র বিমান হামলায় লাখো মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শহরটিতে চলমান বোমাবর্ষণে অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে জমজ শিশু ও সাংবাদিকও রয়েছেন। আল জাজিরা সংবাদমাধ্যমের ১৬ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় ইসরায়েল গাজা সিটিতে ব্যাপক হামলা চালিয়ে এলাকার সর্বোচ্চ আবাসিক ভবন আল-ঘাফরি হাইরাইজ ধ্বংস করেছে। এই তীব্র হামলার ফলে লাখো মানুষ নিরাপত্তার খোঁজে শহর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টার ফ্রান্সেসকা আলবানিজে অভিযোগ করেছেন, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উৎখাত করতে ইসরায়েল অপ্রচলিত অস্ত্র ব্যবহার করছে।
গাজা সিটির উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে ‘অস্বাভাবিক তীব্র হামলা’ চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের টিভি চ্যানেল ১২। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েল অন্তত ৫০টি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে।
শহরের অন্যান্য অঞ্চলও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জায়তুন এলাকায় শুধু আগস্টের শুরু থেকে ১,৫০০-এর বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে লিখেছেন, “সন্ত্রাসের টাওয়ার সমুদ্রে ভেঙে পড়েছে।” তবে তিনি কোনো প্রমাণ দেখাননি যে ওই ভবনটি হামাস ব্যবহার করছিল।
২৩ মাস ধরে চলা এই সংঘর্ষে আবাসিক এলাকা, স্কুল ও হাসপাতালও বারবার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা সিটিতে ৫১ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ছয় বছর বয়সী যমজ শিশু।
এছাড়া তিন সাংবাদিকও পৃথক হামলায় নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন নাসর এলাকার প্রতিবেদক মোহাম্মদ আল-কুইফি, ফটোগ্রাফার ও সম্প্রচার প্রকৌশলী আইমান হানিয়ে এবং সাংবাদিক ইমান আল-জামিলি।
এই নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীর সংখ্যা প্রায় ২৮০-তে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, এটি সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৪,৯০৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ১,৬৪,৯২৬ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মরদেহ চাপা পড়ে আছে।