শারদীয় দুর্গাপূজা বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। পঞ্চমীর বোধন এবং ষষ্ঠীতে আমন্ত্রণ-অধিবাস ও ষষ্ঠীবিহিত পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ মহোৎসব আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পৌঁছেছে মহাষ্টমীতে। আজ দেবী দুর্গার পূজা অনুষ্ঠিত হবে পাঁচ নৈবেদ্য—অগ্নি, বায়ু, বস্ত্র, পুষ্প ও মাল্য দ্বারা। নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর ও প্রবীণরা নির্জলা উপবাস থেকে দেবীর উদ্দেশে অর্পণ করবেন পুষ্পাঞ্জলি। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী সন্ধীপূজা।
মহাষ্টমীর মূল আকর্ষণ হলো ‘কুমারী পূজা’। এখানে একটি কুমারী বালিকাকে দেবীর প্রতীক হিসেবে পূজা করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, বিশুদ্ধ নারীত্বের প্রতিচ্ছবি কুমারী রূপে ভগবতীর প্রকাশ ঘটে। হিন্দু শাস্ত্রমতে, এক থেকে ১৬ বছর বয়সী অবিবাহিত, অজাতপুষ্পা সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্যান্য গোত্রের কুমারী কন্যাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করার প্রচলন রয়েছে। শ্রী রামকৃষ্ণের বাণীতে বলা হয়েছে, মাতৃরূপ উপলব্ধিই কুমারী পূজার প্রধান উদ্দেশ্য।
রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে প্রতিবছরের মতো এবারও ভক্তিমণ্ডিত পরিবেশে হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বী কুমারী পূজায় অংশ নিচ্ছেন। মিশনের তথ্যমতে, আজ সকাল ৬টা ১০ মিনিটে মহাষ্টমীর পূজা শুরু হয়েছে। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি, দুপুর ১২টায় মধ্যাহ্ন প্রসাদ বিতরণ হবে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। আর মহাষ্টমী উপলক্ষে সন্ধিপূজা শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে এবং সমাপ্ত হবে সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে।
শাস্ত্রমতে কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বানাসুর বা কোলাসুরকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে।
উল্লেখ্য, কোলাসুর নামক অসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করে নেয়। কোলাসুর স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হোন। সে সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী দেবতাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী মানবকন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন কুমারী অবস্থায় কোলাসুরকে হত্যা করেন। পুনর্জন্মে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়। প্রতি বছর দুর্গাদেবীর মহাষ্টমী পূজাশেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পুরোহিতদর্পণ প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি এবং মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনানুসারে কুমারী পূজায় কোনও জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যেকোনো কুমারীই পূজনীয়। তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সর্বত্র প্রচলিত। এ ক্ষেত্রে এক থেকে ১৬ বছর বয়সী যেকোনো কুমারী মেয়ের পূজা করা যায়। অনেকের মতে ২ বছর থেকে ১০ বছরের মেয়েদের পূজা করা যায়।
শনিবার বোধন শেষে দুর্গা দেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠী বিহিত পূজা। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ‘মহাসপ্তমী’, ‘মহাষ্টমী’ ও ‘মহানবমী’ পূজা শেষে ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ‘মহাদশমী’ পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হবে আনুষ্ঠানিকতা। এরপর সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গোৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটবে। এবার দেবী দুর্গার আগমন হবে গজে অর্থাৎ হাতির পিঠে চড়ে। আর দশমীতে দেবী মর্ত্যলোক ছাড়বেন দোলা বা পালকিতে চড়ে।
ঢাকায় এবার গতবারের তুলনায় সাতটি বেড়ে মোট ২৫৯টি মন্দির-মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর সারা দেশে মোট মন্দির-মণ্ডপের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩৫৫টি, যা গতবারের তুলনায় হাজারখানেকের বেশি।