Dark
Light
Today: October 15, 2025
September 4, 2025
14 mins read

অফিসে বেতন বৃদ্ধির প্রসঙ্গ কীভাবে বলবেন?

সময় ও অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি কর্মজীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে বেতন সব সময় নিজে থেকেই বাড়বে—এমনটা নয়। অনেক ক্ষেত্রে এ নিয়ে আলোচনা বা দর-কষাকষি করতে হয়, মানবসম্পদ বিভাগ কিংবা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পর্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে হয়। আর এই আলাপ যদি কৌশল ছাড়া হয়, তবে উল্টো আপনার অবস্থান দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব তোলার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।

বেতন বৃদ্ধির আগে

বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করবেন কি না, শুরুতেই নিজের সঙ্গে এই বোঝাপড়াটা সেরে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে চারটি বিষয় বিবেচনা করুন—
১. আপনার শেষ বেতন বৃদ্ধির সময় কি কমপক্ষে এক বছর হয়ে গেছে?
২. গত ছয় মাসে আপনার কাজের চাপ কি লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে?
৩. আপনার কি সামনে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো মূল্যায়ন বা পদোন্নতির বিষয় আছে?
৪. আপনি কি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো দুর্দান্ত কাজ করেছেন?
এসব প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে আপনি বেতন বাড়ানোর কথা বলতে পারেন। আর যদি ‘না’ হয়, তাহলে এসব প্রশ্নের পরিস্থিতি তৈরি করে তারপর বেতন বাড়ানোর কথা বলুন।

হোমওয়ার্ক করুন

বেতন নিয়ে আলাপ শুরুর আগে সামগ্রিকভাবে বাজার ও আপনার কর্মক্ষেত্রের পরিস্থিতি বুঝতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ট ‘হোমওয়ার্ক’ না করেই কর্মীরা বেতন বৃদ্ধির কথা বলেন। আপনি যে পদে, যে প্রতিষ্ঠানে বা যে ক্ষেত্রে কাজ করছেন, বর্তমান বাজারে এর প্রচলিত বেতন সম্পর্কে জানুন। লিংকডইন কিংবা বিডি জবসের মতো বিভিন্ন পোর্টাল থেকে বাজারমূল্য বুঝুন। এরপর আপনার কর্মক্ষমতার স্বমূল্যায়ন করুন। আপনার দক্ষতা ও মূল অর্জনকে বিশ্লেষণ করুন।

প্রতিষ্ঠানে আপনার কাজের মাধ্যমে কতটা ভূমিকা রাখছেন, তা সংখ্যায় বোঝার চেষ্টা করুন। প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লাভ কিংবা পণ্য বা সেবার বিক্রয় বৃদ্ধিতে কতটা ভূমিকা রেখেছেন, তা জানুন। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের এক নিবন্ধ বলছে, বাজেট কাটছাঁট বা মন্দার সময়টা বেতন বৃদ্ধির কথা তুললে সুফল মেলে না। এ সময়ে আলাপ করলে আপনি ব্যর্থ হতে পারেন।

সঠিক সময় বুঝে কৌশল নির্ধারণ করুন

মন চাইলেই বেতন বাড়ানোর আবেদন করবেন, বিষয়টি যেন এমন না হয়। ইতিবাচকভাবে আপনার কর্মক্ষমতা পর্যালোচনার পর বেতন বাড়ানোর জন্য আলোচনা শুরু করার পরামর্শ দেয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ।

প্রতিষ্ঠানের নতুন বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার কয়েক মাস আগে আলাপ করতে পারেন। আপনি কোনো কাজে সাফল্য অর্জন করলে কিংবা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো কোনো অর্জনে ভূমিকা রাখলে আলাপ শুরু করুন। কোম্পানির আর্থিক ক্যালেন্ডার বিবেচনা করাও বুদ্ধিমানের কাজ।

যখন আপনার ম্যানেজারের সঙ্গে বেতন বাড়ানো নিয়ে কথা বলবেন, তখন আপনার চাহিদার পেছনে কারণ স্পষ্ট থাকা জরুরি। খেয়াল রাখবেন, বেতন বাড়ানোর বিষয়টি কিন্তু কোনো অনুগ্রহ বা দয়া নয়। তাই নিজের ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোম্পানির কাজে কীভাবে আপনি মূল্য যোগ করছেন, তা তুলে ধরার মাধ্যমে আপনার দাবি জোরালো হবে।

আপনার ভবিষ্যতের অবদান ও বেতন বৃদ্ধি প্রতিষ্ঠানের কাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা জানাতে হবে। আপনার প্রতিশ্রুতি ও প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে মনোনিবেশ করুন।

ব্যক্তিগত আর্থিক চাহিদা, যেমন বাড়ি ভাড়া বা গাড়ির ভাড়া বৃদ্ধি—বেতন নিয়ে আলোচনার সময় এসব আলাপ এড়িয়ে চলুন। আপনি কাজের মূল্যায়নের জন্য বেতন বাড়ানোর কথা বলবেন, অন্য কোনো কারণে বেতন বাড়াতে হবে, তা নয়।

আত্মবিশ্বাস ও নমনীয়তা

বেতন বৃদ্ধি নিয়ে কথোপকথনের সময় কর্মী হিসেবে আপনার আত্মবিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ। বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি যেন সংখ্যাভিত্তিক হয়, সে বিষয়টি স্পষ্ট করুন।

হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের ভাষ্যে, বেতন বাড়ানোর আলোচনার সময় আপনি যে দর–কষাকষি করবেন, সেখানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মান উল্লেখ করুন। নমনীয়তা প্রকাশ করুন। যদি বিশ্বাস করেন, বেতন ৫ শতাংশ বৃদ্ধির যোগ্য, তাহলে আলাপের সময় ৫–৭ শতাংশের প্রস্তাব করতে পারেন।

বৃদ্ধির বিকল্প খুঁজুন

এখনকার বাস্তবতায় মূল বেতনের বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারেন। যদি সরাসরি বেতন বৃদ্ধি সম্ভব না হয়, তাহলে বিকল্প কোনো উপায় বের করতে পারেন।

এককালীন বোনাস কিংবা পদোন্নতির বিষয়টি ভাবতে পারেন। ঐচ্ছিক ছুটি বাড়াতে পারেন। পেশাদার উন্নয়নের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের বিষয়টিও আলাপে আনতে পারেন।

হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অধ্যাপক হান্না রিলে বোলস যেমন বলেন, স্বল্পমেয়াদি বেতন বৃদ্ধির চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে পেশাজীবনের উন্নয়নের জন্য আরও সিনিয়র পদ বা নতুন দায়িত্বের জন্য আলোচনা করার উপকার বেশি।

আরও যা খেয়াল রাখবেন

বেতন বাড়ানোর আলাপে নিজের আবেগ নয়, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশকে গুরুত্ব দিন। দর–কষাকষির আলাপ নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে মক টেস্টের মতো আলোচনা করতে পারেন। বন্ধুকে ম্যানেজার বা মানবসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে সাজিয়ে আলোচনার চর্চা করতে পারেন।

বেতন বাড়ানোর আলাপের জন্য নির্ধারিত ব্যক্তি বা ম্যানেজারের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিন। সময় নিয়েই আপনার কথাগুলো তুলে ধরুন। লিফটে দেখা হলে বা গাড়িতে যাওয়ার সময় বলে বসলেন, ‘স্যার, আমার বিষয়টা একটু দেখবেন’—এমন যেন না হয়।

বেতন বৃদ্ধির আলাপের পর প্রতিষ্ঠানকে সময় দিতে হবে। কয়েক দিন বিরতির পর বিষয়টি ই–মেইলের মাধ্যমে আবার জানাতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনার ‘প্ল্যান বি’ কী হবে, তা ঠিক করতে সময় নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Previous Story

“তাঁকে সিইও করা হয়নি, কিন্তু পরে সেই প্রতিষ্ঠান কিনে মালিককে জুলিয়া কী বললেন?”

Next Story

“৩৬ জুলাইয়ের আদলে ৩৬ অঙ্গীকার”

Previous Story

“তাঁকে সিইও করা হয়নি, কিন্তু পরে সেই প্রতিষ্ঠান কিনে মালিককে জুলিয়া কী বললেন?”

Next Story

“৩৬ জুলাইয়ের আদলে ৩৬ অঙ্গীকার”

Latest from Blog

আলি আমজদের ঘড়িঘর

সরোজ কান্তি দেওয়াঞ্জী , সিলেট শহরের কোর্ট পয়েন্টে, সুরমা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে এক পুরোনো সাক্ষী—আলি আমজদের ঘড়িঘর।যে ঘড়িঘর দিনের আলোয় সময় বলে, আর রাতে শহরের নিস্তব্ধতায় অতীতের গল্প শোনায়। বলা হয়,

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর ২০২৫ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ বৈঠক

কিছু উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের কণ্ঠ রেকর্ডসহ প্রমাণ রয়েছে: তাহের

অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা প্রশাসনে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর অনুগতদের বসিয়ে ‘পরিকল্পিত নির্বাচন’ আয়োজনের ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি দাবি করেছেন, এ ষড়যন্ত্রে

শাপলার পরিবর্তে নতুন প্রতীক নির্বাচনে এনসিপিকে সময়সীমা নির্ধারণ করল ইসি

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে দলটিকে শাপলার বিকল্প প্রতীক বেছে নিতে হবে। মঙ্গলবার

ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা

আওয়ামী লীগের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে, আর সেই অর্থ ব্যবহার করে তারা আসন্ন নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের সদস্যদের ঝটিকা মিছিলে অংশ নিতে প্রলুব্ধ করতে
Go toTop